দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছার বিষয়ে এখনি হাত দিয়ে হাত পুড়তে চায় না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কাজী জেবুন্নেছার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবে।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনার জহিরুল হক সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের কাজী জেবুন্নেছার বিরুদ্ধে অনিয়মের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, ‘এত গরম গরম হলে তো হবে না, উষ্ণতার মধ্যে যদি গরম গরম হাত দেওয়া হয় তাহলে হাত পুড়ে যাবে। একটু ঠাণ্ডা হোক, সুনির্দিষ্ট তথ্য এলে আমরা খতিয়ে দেখব।’
দুদক কমিশনার বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য এলে আমরা খতিয়ে দেখব। এমনি বললে হবে না। এখানে এত বিঘা ও বিদেশে এত সম্পত্তি এটা বললে হবে না। জমি থাকলে কোন জায়গায়, টাকা কোন হিসাবে, এ রকম সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে আমরা খতিয়ে দেখব।
গত সোমবার (১৭ মে) রাতে ভাইরাল হওয়া ৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্তব্যরত উগ্র প্রকৃতির এক নারী দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরে তাকে শাসাচ্ছেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
আর ফেসবুক জুড়ে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ আজও চলছে। একই সঙ্গে রোজিনার গলা চেপে ধরা ওই নারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করছেন। বলা হচ্ছে, একজন সরকারি কর্মচারি হয়ে কিভাবে একজন মানুষের গলা চেপে ধরতে পারেন। তিনি কোথায় এতো সাহস পেল গায়ে হাত দেবার। তার বিচার চাই।
জানা যায়, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে পুলিশ দিয়ে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই উগ্র নারী রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরে তাকে শাসাচ্ছিলেন। এসময় তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পড়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় জেবুন্নেছার নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, ব্যাংকে জমানো টাকার তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ঢাকায় তার নামে চারটি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। একাধিক ব্যাংকে তার নামে-বেনামে শতকোটি টাকার এফডিআর থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার অদূরে গাজীপুরে তার নামে ২১ বিঘা জমি, কানাডায় তিনটি বাড়ি ও পূর্ব লন্ডনে বাড়ির তথ্যও উঠে এসেছে। এসব তথ্য দুদকেরও নজরে এসেছে বলে জানা গেছে।
দুদক কমিশনার আরও বলেন, প্রত্যেক বিভাগে দুর্নীতি আছে, আবার প্রত্যেক বিভাগে ভালো মানুষও আছে। স্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সুনির্দিষ্ট হতে হবে, তথ্যভিত্তিক হতে হবে। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো।
জানা গেছে, জেবুন্নেছার নামে-বেনামে সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংক, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, বিআরটিএসহ সংশ্নিষ্ট অফিসগুলোর কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে। তথ্য পাওয়ার পর সেগুলো যাচাই করা হবে। এরপর জেবুন্নেছাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। তার বক্তব্য নেওয়ার পর তার নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিক রোজিনাকে শারীরিকভাবে হেনস্তার পর সারাদেশে জেবুন্নেছার আচরণের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। একে প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার পেশাদারিত্বের বড় ধরনের ঘাটতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সমালোচনার পর তিনি ওই নারী সাংবাদিককে হেনস্তার কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তা সাংবাদিক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ