করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ভারতের মণিপুর রাজ্যের বিজেপি নেতার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করায় একজন সাংবাদিক ও এক রাজনৈতিককর্মীকে গ্রেফতার করা হয়ছে।
সাংবাদিক কিশোরচন্দ্র ওয়াংখেম ও রাজনৈতিককর্মী ইরেন্দ্রো লেইচম্বমকে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি উশাম দেবান ও সাধারণ সম্পাদক পি প্রেমানন্দ মেতেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতে তোলা হলে দুজনকে ১৭ মে অবধি পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দুজন মণিপুর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাইখম টিকেন্দ্র সিংহের মৃত্যু নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। বিজেপি নেতার মৃত্যুর পর ওই সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী লেখেন, ‘গোবর ও গোমূত্র কাজ করে না।’
এর আগেও সাংবাদিক কিশোরচন্দ্রকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টের কারণে দুটি ভিন্ন মামলায় দুবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। মণিপুরের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনে।
ভারতে আক্রান্ত ৩ লাখের নিচে
করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে প্রায় এক মাস পর প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিন লাখের নিচে নেমেছে, কিন্তু আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সোমবার সকালের আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন দুই লাখ ৮১ হাজার ৩৮৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে আর একই সময় মৃত্যু হয়েছে ৪১০৬ জনের।
দেশটিতে ২১ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ২৫ দিন ধরে দৈনিক তিন লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল। তারপর থেকে এই প্রথম সংখ্যাটি তিন লাখের নিচে নামল। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় শুধু যুক্তরাষ্ট্র ভারতে আগে আছে।
২৮ এপ্রিল থেকে ভারতে প্রতিদিন কোভিড-১৯ এ তিন হাজারেরও বেশি রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর বিশ্বে তৃতীয় স্থানে থাকা এ দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৩৯০ জনের। জানুয়ারিতে ভারতজুড়ে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করা হলেও এখন টিকা সংকটে এর গতি শ্লথ হয়ে গেছে। এর মধ্যেই দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন রোববার জানিয়েছেন, পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো ৫১ লাখেরও বেশি টিকা পাবে।
অতিরিক্ত কোভিড-১৯ রোগীর চাপে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হওয়ায় বহু দেশ ভারতে জরুরি সহায়তা হিসেবে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, তারা ২৭ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত রাজ্যগুলোতে ’১১ হাজারেরও বেশি অক্সিজেন কনসেনট্রেইটর, ১৩৪৯৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১৯টি অক্সিজেন জেনারেশন প্ল্যান্ট, ৭৩৬৫ ভেন্টিলেটর ও পাঁচ লাখ ৩০ হাজার শিশি রেমডিসিভির’ পাঠিয়েছে।
ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) উৎপাদিত অ্যান্টি-করোনাভাইরাস ওষুধ সোমবার ছাড়া হচ্ছে। ওষুধটির নাম রাখা হয়েছে টু-ডিঅক্সি-ডি-গ্লুকোজ বা টু-ডিজি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করার জন্য দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ আরোপ করা বিধিনিষিধের সময় রোববার আরও বাড়িয়েছে। রোববার থেকে শুরু হওয়া ১৫ দিনের লকডাউন চলছে পশ্চিমবঙ্গে।
ভারতে যে তিনটি করোনাভাইরাস টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার অন্যতম ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন ভাইরাসটির ভারতীয় ধরন বলে পরিচিতি পাওয়া বি.১.১৬৭ ও যুক্তরাজ্যের ধরন বি.১.১.৭ এর বিরুদ্ধে কার্যকরী বলে রোববার কোম্পানিটি দাবি করেছে।
দেশটির উত্তর প্রদেশ ও বিহারে গঙ্গা নদীতে কয়েকদিন ধরে ভেসে আসা বহু লাশ পাওয়ার পর সৃষ্ট ক্ষোভের প্রেক্ষিতে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় নদীর পাড়গুলো ধরে টহল জোরদার করেছে পুলিশ। মৃতদেহ যেন নদীতে ফেলা না হয় তা দেখতে রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৪০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ