বাংলাদেশে যখন করোনা ভাইরসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে কমছে তখন ঈদকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে মানুষ যে ভাবে শহর ছেঁড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে তাতে করোনার আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন যা ঘটছে তাতে হয়ত করোনা সংক্রমণ আগামী জুন মাসেই আরেক দফা আঘাত হানতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ সহিদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেছেন এ ধরনের একটি পরিস্থিতি সামাল দেয়া দেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার জন্য কঠিন হবে।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই দ্রুত বিস্তার মান করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন অন্তত দুইজন ভারত ফেরত যাত্রীর শরীরে শনাক্ত হয়েছে। ভারতে পাওয়া করোনার এই ধরনকে বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ সংবাদ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলেও করোনা দুর্যোগের মধ্যে ঈদকে সামনে রেখে দোকানপাট ও শপিং মলে কেনাকাটা এবং গ্রামে যাওয়ার হিড়িক দেখে মনে হচ্ছে এ দেশে ঈদ আর কখনো ফিরে আসবেনা।
গত বছর দেশে ঈদুল ফিতরের পরপরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বড় লাফ দেখা দিয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এবারও একই পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারে যে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল, তা একটা পর্যায়ে এসে ইতিমধ্যে থমকে গেছে। গত পাঁচ দিনে খুব সামান্য হলেও রোগী শনাক্তের হার বাড়তে দেখা গেছে।
গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ১৬ এপ্রিল থেকে প্রায় প্রতিদিন রোগী শনাক্তের হার কমতে দেখা গেছে। এই প্রবণতা ছিল ৬ মে পর্যন্ত। এরপর তাতে ছেদ পড়েছে। সর্বশেষ পাঁচ দিনে (৭–১১ মে) মোট পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর তার আগের পাঁচ দিনে (২–৬ মে) শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল গণমাধ্যমকে বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে লকডাউনের যে সুফল পাওয়া যাচ্ছিল, তা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল। আগামী দুই–তিন সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এর মধ্যে দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ঈদের পর একটি সাংঘাতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা দীর্ঘদিন লকডাউন চালানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা), রোগীর সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা এবং সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি নিশ্চিত করা জরুরি।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নেই। ঘরে থাকলে জীবনে আরো ঈদ আসবে। অনেক উন্নত দেশও করোনার চাপ সহ্য করতে পারছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে উন্মুক্ত স্থানে ঈদের নামাজ আদায় এবং ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে হাত মিলাতে ও কোলাকুলি না করার আহ্বান জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাইকে কোয়ারেন্টিনের ব্যাপারে সহযোগিতা করারও আহবান জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ