কওমি শিক্ষক ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীকে আটক করেছে পুলিশ। সাংবাদিকদের জবাই করার ঘোষণা দেয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান।
রাতে (১১ এপ্রিল) গণমাধ্যমকে তাকে আটকের খবর নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় ইস্যুকে পুঁজি করে ওয়াসেক বিল্লাহর উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করার কয়েকটি ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। ওইসব বক্তব্য ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করাসহ মানুষকে ভিন্ন পথে ধাবিত করার একটি অপপ্রয়াস। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওয়াসেক বিল্লাহ এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। মামলা দায়েরের পর সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
জানা গেছে, ওই মাদরাসার নূরানি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ মাহমুদ জানান, নোমানীর বাড়ি ও জন্ম নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায়। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। ২০১২ সালে তিনি হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন। এরপর থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে আছেন।
নোমানী শহরের সানকিপাড়ায় সরকার রোডের ১১০/২ নম্বর বাড়ি ‘সুখ আলয়’-এ ভাড়া থাকেন। তবে একাধিক হেফাজত নেতার দাবি, নোমানী হেফাজতে ইসলামের কোনো কমিটিতেই নেই। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় নোমানীর বাড়ি।
মাওলানা নোমানী যা বলেছেন
৩ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে মাওলানা নোমানী স্পষ্টত তার সমর্থকদের আইন ভঙ্গের প্ররোচনা দিয়েছেন। হত্যা, রক্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নোমানীকে বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহ যদি আমাদেরকে তৌফিক দেয়, আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যদি আল্লাহ তৌফিক দেয় আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত কায়েম করতে পারি, আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, সংবাদ লেখার টাইম পাবি না। সংবাদ লেখার টাইম পাবি না। একটা একটা ধরব আর জবাই করব, জবাই করব ইনশাল্লাহ।’
এ সময় মাওলানা নোমানী হাত দিয়ে জবাই করার বিষয়টি দেখান। আর ওয়াজে উপস্থিত শ্রোতারা সবাই উচ্চস্বরে চিৎকার করেন। এ সময় অমুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানি দিতেও শোনা যায় নোমানীকে। তিনি বলেন, ‘অমুসলমান, এখন থেকে আমরাও তইয়ার (তৈরি)। আমাদেরকে ঘাড় ভাঙবি, আমরাও ঘাড় ভাঙব। কারা কারা তইয়ার?’
শ্রোতারা এই পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকলে মাওলানা নোমানী বলেন, ‘তবে রক্ত দিতে হবে, রক্ত, রক্ত। আমার বয়ানই আজকে রক্ত নিয়ে। ও মুসলমান রক্ত দিতে রাজি আছেন?’
তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘সবাই সবাই। বুঝেন, চিন্তা করে বলেন। ভয় পাচ্ছেন না তো, নাকি? ভয় পাচ্ছেন না তো? রক্ত দেবেন ইনশাল্লাহ? রক্ত দেবেন তো ইনশাল্লাহ? রক্ত দিয়েছে কে? তাহলে মুসলমান, আজকে থেকে ডায়লগ পরিবর্তন। ডায়লগ চেঞ্জ।
‘এখন থেকে আর রক্ত দেবো না, অনেক রক্ত দিয়েছি আমরা। রক্ত দিতে দিতে এ জীবন শেষ করে দিল। এখন থেকে সাফ সাফ কথা। এখন থেকে আর রক্ত দেবো না। কারা কারা তইয়ার? রক্ত নেব, রক্ত নেব, রক্ত নেব ইনশাল্লাহ।’
সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা বলেন, আমাদের দেশের ওয়াজ মাহফিলে কিছু বক্তব্য যেগুলোতে ধর্মীয় অনুশাসন বা ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক বিদ্বেষ সৃষ্টির বা রাজনৈতিক কথাবার্তা বলে। সেগুলো আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় মনিটর করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক সুরাইয়া আকতার বলেন, ওয়াজ মাহফিলে কিছুটা তদারকি থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন। এগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই আমার মতে, কিছু বিদ্বেষ ছড়ানোর বিষয়তো আছে। কারণ ওয়াজের অনেক বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে তর্ক বিতর্ক আছে। আমরা এ বিষয়ে যে পড়াশুনা করাই এবং সেজন্য বই পুস্তক দেখে আমরা যতটুকু জানি সেগুলোর সাথে তাদের ওয়াজের অনেক সময়ই মিল থাকে না। আর তারা যেহেতু সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তারা কথা বলেন, সেজন্য কিছুটা তদারকি দরকার, বলেন এই অধ্যাপক।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ