সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগরসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা,সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কে বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে সকাল ৬টা-সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চলাচল করবে। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকালে ওবায়দুল কাদের নিজের বাসভবনে ব্রিফিংকালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘লকডাউন পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও জনসাধারণের যাতায়াতে দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গণপরিবহন চলাচলের বিষয়টি শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে পুনর্বিবেচনা করে অনুমোদন দিয়েছেন।’ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল যথারীতি বন্ধ থাকবে বলেও তিনি জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামীকাল ৭ এপ্রিল বুধবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে উল্লেখ করেন। ‘প্রতি ট্রিপের শুরু এবং শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত এবং পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কোনোভাবেই সমন্বয়কৃত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালনে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন।
এর আগে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতির মধ্যে গণপরিবহন চলাচলের দাবি জানিয়েছিলো পরিবহন মালিকরা। তাদের বক্তব্য শুধুমাত্র রাজধানীতে শর্তমেনেই বাস চলতে দেওয়া হোক।
বাস মালিকদের এমন সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে সরকার। কিভাবে, কোন উপায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলে বলে জানায় সড়ক মহাসড়ক বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ের উল্লাহ বলেছিলেন, অফিস আদালত সবই খোলা। বাস ও লঞ্চ বাদে সব পরিবহনই চলছে। ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের। তাই আমরা সরকারকে বলছি শুধুমাত্র ঢাকার জন্য বাস চলাচল চালুর অনুমতি দিতে। আমাদের অনুরোধ বিবেচনা করার উদ্দেশ্যে সরকার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রথমে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের কথা বলা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাস মালিকদের দাবিতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর আরও ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে গত ৪ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে গণপরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিকে, সড়কে যানবাহন থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অফিসমুখী মানুষজনকে দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে। মতিঝিলে বেসরকারি অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, “একদিকে গণপরিবহন বন্ধ আবার সরকারি-বেসরকারি অফিসেও খোলা। যানবাহন নেই বলে আমাদের কষ্টের সীমা নেই। রিকশায় অফিসে আসা-যাওয়া করতে বেশি ভাড়া এখন গুণতে হচ্ছে। রামপুরায় থাকি, এতো দূর থেকে তো আর পায়ে হেঁটে আসা যায় না। সেজন্য আমাকে বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে অফিসে যেতে।
সকালে খিলগাঁও থেকে নতুনবাজারের কর্মস্থলে যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু সালেহ আহমেদ। বাসে তার খরচ হতো ১০ টাকা। আজ সকালে তিনি ৮০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে অফিসে যান। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এভাবে বাড়তি ভাড়া দেওয়া আমাদের মতো মধ্যবিত্তের পক্ষে সম্ভব না। আবার অফিসও খোলা, যেতেই হবে। আমরা অনেক বিপাকে আছি।’
সারাদেশে একযোগে সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের এরকম ‘লকডাউন’ এই প্রথম। গত বছর মার্চ মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সরকার অফিস-আদালত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিল। রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগ, রায়ের বাজার, ওয়ারী এলাকায় সংক্রমণ বেড়ে গেলে ১৪ দিন লকডাউন দিয়ে সব কিছু বন্ধ এবং যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৪৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ