চট্টগ্রাম মহানগরীর আরেফিন নগর এলাকায় পাহাড় কাটার অপরাধে একটি কওমি মাদ্রাসাকে ৭৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার জালালাবাদ সংলগ্ন আরেফিন নগর এলাকার ‘জালালাবাদ তালীমূল কোরআন মাদ্রাসা’র পরিচালক হাফেজ মো. তৈয়বকে জরিমানা করার এ আদেশ সোমবার (৫এপ্রিল) পরিবেশ অধিদপ্তরের সদরদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে পৌঁছায়।
সোমবার দুপুরে জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, গত ৩১ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরে এক শুনানি হয়। শুনানিতে পাহাড় কাটার অপরাধে হাফেজ মো. তৈয়বকে ৭৮ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
হাফেজ মোঃ সৈয়দের কাছে পাঠানো রুবিনা ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করে আপনার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের একটি টিম।
‘এর প্রেক্ষিতে আপনাকে শুনানির জন্য পর পর তিনবার নোটিশ প্রদান করা হলেও আপনি বা আপনার প্রতিনিধি শুনানিতে হাজির হননি। পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আপনি জালালাবাদ আরেফিন নগরে চারটি স্থানে সর্বমোট এক লাখ ৫৬ হাজার ১৫০ ঘনফুট পাহাড় কেটেছেন।
‘এই অপরাধে আপনাকে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৭ অনুযায়ী প্রতিবেশগত ক্ষতিসাধনের দায়ে এনভায়রনমেন্টাল ড্যামেজ অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতিতে ৭৮ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হলো।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, জরিমানা করা টাকা আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব পাহাড় কাটা হয়েছে সেগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অভিযুক্তকে তিন মাসের সময় দেয়া হয়েছে। অন্যথায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
এই বিষয়ে জানতে জালালাবাদ তালীমুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মো. তৈয়বকে একাধিবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে ওই মাদ্রাসার অফিস সহকারী বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের মাদ্রাসা পাহাড়ে অবস্থিত। তবে পাহাড় কাটার বিষয়টি বড় হুজুর জানবেন। জরিমানার বিষয়টিও জানি না।
জালালাবাদ তালীমুল কুরআন মাদ্রাসায় হেফজখানা ও নুরানী বিভাগ রয়েছে। মাদ্রাসাটিতে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।
পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে পাহাড় খোদাই চলতে থাকলে আগামী পাঁচ দশকের মধ্যে বিশেষ করে চট্টগ্রামে আর পাহাড় দেখা যাবে না। পাহাড় কাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। বন হারাচ্ছে তার চেনা রূপ। এ কারণে বনের নানা প্রাণী হাঁটছে বিলুপ্তির পথে।
তারা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় সড়ক যোগাযোগ, পানি সরবরাহ প্রকল্প, হাসপাতাল, মাদ্রাসা, স্কুলসহ যেকোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে পাহাড় কাটা বা ভূমিরূপে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশে যেন বড় ধরনের বিপর্যয় না ঘটে।
পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব সরকারি সংস্থাগুলোকেই নিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে যারা পাহাড়ের মালিক হয়ে আছেন তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বসতি, মাদ্রাসা কিংবা কলকারখানা স্থাপনের নামে আর পাহাড় কাটা যাবে না। এটা সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ