সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজার ও মডার্নার দুই ডোজের মধ্যে প্রথম ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পরেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যায়।
মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনায় সম্মুখসারিতে কর্মরত প্রায় চার হাজার মানুষের ওপর এই পরীক্ষা চালিয়ে আরও জানা যায়, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। মঙ্গলবার (৩০মার্চ) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এই গবেষণায় সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার পরীক্ষা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন পরিচালিত নতুন এই গবেষণার ফলাফল প্রথম ডোজ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার বিষয়টিকে ফের প্রমাণ করল। এছাড়া, ভ্যাকসিন যে উপসর্গবিহীন সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম সে বিষয়টিও প্রমাণিত হলো। তবে, দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যথারীতি দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার জন্যই পরামর্শ দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে সিডিসির পরিচালক রোশেল ওয়ালেন্সকি জানান, ‘এই পরীক্ষা থেকে আমরা আমাদের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছি।’
মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) প্রযুক্তিতে তৈরি এই ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতার সাম্প্রতিক ফলাফল গবেষণাগারে পরিচালিত ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফলকে নিশ্চিত করছে। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৩ সপ্তাহ ধরে চরেছে এই পরীক্ষা।
নতুন এমআরএনএ প্রযুক্তি হচ্ছে এক ধরণের সিনথেটিক রাসায়নিক মেসেঞ্জার, যা প্রোটিন তৈরি করার জন্য শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয়। বিশেষ এই প্রোটিনগুলোর গঠন নভেল করোনাভাইরাসের মত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।
এদিকে আমেরিকান সংস্থা ফাইজার-বায়োএনটেক ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের উপর করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা শুরু করেছে। সংস্থাটি আশা করছে যে টিকা দেওয়ার বয়সসীমা ২০২২ সালের মধ্যে বাড়ানো যাবে। ফাইজারের মুখপাত্র শ্যারন কাস্টিলো জানিয়েছেন, বুধবার (২৪মার্চ ) প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার জন্যে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রথম ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে মডার্নাও শিশুদের উপর তাদের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরুর কথা জানিয়েছে। এটি একটি পেডিয়াট্রিক ট্রায়াল যা ৬ মাস বয়সী শিশুদের দেওয়া হবে। বর্তমানে শুধু ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনটি যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ এবং ১৭-বছরের শিশুদের দেওয়া হচ্ছে। মডার্নার ভ্যাকসিন ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও ছোট বাচ্চাদের জন্য কোনও ভ্যাকসিন অনুমোদিত হয়নি।
ফাইজার-বায়োএনটেক পরবর্তী সময়ে তরুণদের মধ্যে অ্যান্টিবডি স্তর পরিমাপ করে এই ট্রায়ালটি প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেছে। ভ্যাকসিন দ্বারা নাগরিকদের সুরক্ষা, সহনশীলতা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করবে বলে গেছে।
কাস্টিলো বলেন, ফাইজার ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছে। ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এই ট্রায়ালের আশানুরূপ রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে এই ভাইরাসে শনাক্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৮২ লাখ ৩১ হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৮ লাখ তিন হাজার ৯৯১ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৪ জন। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৬৩ হাজার ২০৬ জন মারা গেছেন। এছাড়া করোনা শনাক্ত হয়েছেন তিন কোটি ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৮১০ জন। আর সুস্থ হয়েছেন দুই কোটি ৩৫ লাখ নয় হাজার ২২০ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে ব্রাজিল। আক্রান্ত এবং মৃত্যু বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ২৫ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৪ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ১৪ হাজার ২৬৮ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন এক কোটি নয় লাখ ৬৯ হাজার ২৪৭ জন।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। এশিয়ার মধ্যে ভারতই হচ্ছে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ। ভারতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৩২৯ জন। মারা গেছেন এক লাখ ৬২ হাজার ১৪৭ জন। আর সুস্থ হয়েছেন এক কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ৮২৯ জন।
শনাক্তের তালিকায় রাশিয়াকে ছাড়িয়ে চারে উঠে এসেছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত ৪৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯৪ হাজার ৯৫৬ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ২৯ লাখ ৮১০ জন।
পঞ্চম স্থানে থাকা রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত ৯৮ হাজার ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত ৪৫ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৮ জন। এরপর শনাক্তের দিক থেকে তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, তুরস্ক ও জার্মানি। আর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও পাঁচ হাজার ১৮১ জন। যা বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৮৯৫ জন।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী। এ নিয়ে দেশে মোট করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট হাজার ৯৪৯ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশটিতে করোনায় প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। ওই বছরেরই ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ