আফরিন আফসার মাহী :: হেফাজতে ইসলামের দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও মিছিলে ব্যবহার করা হয়েছে মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীদের। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া, ফটিকছড়ি ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভোরের আলো ফুটতেই এসব ক্ষুদে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দেখা গেছে।
শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের সংগঠিত সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার শিকার হয়েছে অসংখ্য শিশু। হাটহাজারীতে শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৯ ক্ষুদে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে স্থানীয়রা।
রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, সিলেটে চরম সহিংসতায় শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে ঢাল হিসেবে। বিশেষ করে হরতালের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেট নিক্ষেপ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করতে শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ।
জাতিসংঘের ইউনিসেফের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার করার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও হেফাজতে ইসলামের মিছিল ও বিক্ষোভের অগ্রভাগে শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে শিশু ও মনোরোগ পরামর্শক ফজিলেতুন নেসা শাপলা বলেন, কোমলমতি শিশুদের যখন লেখাপড়া এবং খেলাধুলা করার কথা, তখন তাদের সহিংস কাজে নৃশংসভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং চরম মানবতাবিরোধী। রাজনীতিতে হীনম্মন্যতার কাজে ব্যবহারের ফলে শিশুরা শিশুসুলভ আচরণ ভুলে যায়। আচরণে একধরনের উন্মাদনা দেখা দেয়।
সুচিন্তা ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, অধিকাংশ শিশুর মা বাবা জানেন না তাদের সন্তানকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার সংবিধান, আন্তর্জাতিক শিশু সনদ এবং জাতীয় শিশুনীতির পরিপন্থী। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের পঙ্গু করে জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার জন্য এই হীন পাঁয়তারা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
হাটহাজারীতে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে লাঠি, ইট পাটকেল -এমন দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। একসময় ‘জেহাদি জেল্লায়’ কী উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল তাদের কচি কচি মুখগুলো যখন তারা সকালের দিকে অবরোধে অংশ নিচ্ছিল। কিন্তু পুলিশী অভিযানের মুহূর্তে দারুণ ভয়ার্ত দেখাচ্ছিল তাদের চাহনি। বেঁচে থাকবার আকুতিতে ছুটে পালাবার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা।
কেউ যদি এই সমস্ত শিশুদেরকে ব্যবহার করে তাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ নেবার নজিরও নেই দেশে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুরা আক্রান্ত হওয়ায় বেশ কয়েকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেন’স ফান্ড (ইউনিসেফ)। ঢাকাস্থ ইউনিসেফের কার্যালয়ের বিভিন্ন প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
আশঙ্কাজনকভাবে শিশুরা আন্দোলনের শিকার হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক সুবিধার জন্য শিশুদের ব্যবহার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের আগে ও চলাকালে শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে। সব দেশে রাজনৈতিক কোলাহল থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখতে রাজনৈতিক দলের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা ।
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ