চীন ও ভারতের মধ্যে ঢাকা কাউকে বেছে নেবে না বা পক্ষ নিতে যাবে না, তবে ইন্দো-প্যাসিফিক পরিকল্পনায়ও অংশগ্রহণের আগ্রহ রয়েছে ঢাকার। যদিও বাংলাদেশ চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ (বিআরআই) উদ্যোগের অংশ। মঙ্গলবার লন্ডনভিত্তিক একটি থিংক ট্যাংকের আয়োজনে ভার্চুয়াল সেমিনারে অংশ নিয়ে একথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।
সেমিনারে আরও অংশ নিয়েছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি উপদেষ্টা পঙ্কজ সরণ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা প্রকল্পের প্রধান রাহুল রায় চৌধুরী।
গওহর রিজভী বলেন, বাংলাদেশে চীনের ভূমিকা অনেক। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে চীন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঠিকই, তবে তা কোনোভাবেই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট করার মতো নয়।
তিনি আরও বলেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং আপনি এর চেয়ে ভিন্ন কিছু কল্পনা করতে পারবেন না। অন্যভাবে চিন্তা করা আত্মঘাতী হতে পারে।
এসময় ‘ব্লু ইকোনমি’ বা সামুদ্রিক অর্থনীতি, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের উপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা। তিনি জানান, এটি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বঙ্গোপসাগর দ্রুতই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ভিত্তি হয়ে উঠছে।
কোভিড-১৯ লকডাউনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্রথম বিদেশ সফরে আগামী ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশে আসছেন। এই সফরের উদ্দেশ্য দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করা।
শুধু তিস্তার পানি নয়, অববাহিকা-বিস্তৃত ব্যবস্থা প্রয়োজন
রিজভী এবং সরণ উভয়ই তিস্তার পানি বন্টন সমস্যা সমাধানে ভারত-বাংলাদেশ কতটা অগ্রসর হল, এ নিয়ে কথআ বলেন। তিস্তা সিকিম, পশ্চিম্বঙ্গ, বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে।
জবাবে গওহর রিজভী বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে তিস্তা অন্য অনেক ইস্যু থেকে আমাদের বিচ্যুত করছে। তিস্তা ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে ইঙ্গিত করে তিনি এ কথা বলেন।
আমাদের অববাহিকা-বিস্তৃত ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা উচিত, যেন দুই দেশই একে অন্যের ক্ষতি না করে উপকৃত হতে পারে, তিনি আরও বলেন।
এ সময় ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্যে ১৯৯৬ সালে গঙ্গা পানি চুক্তির কথা মনে করিয়ে দেন ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি উপদেষ্টা পঙ্কজ সরণ।
তিনি বলেন, আমরা তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ইস্যুতে ঢাকার সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে তৈরি সমস্যায় কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা, এ প্রশ্ন রিজভী বলেন, ঢাকা এখনও রোহিঙ্গাদের সম্মানের সাথে এবং নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
২০১৫ সাল থেকে মিয়ানমারের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে করে রোহিঙ্গারা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের হিসাবে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে কমপক্ষে ৭ লক্ষ ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
রিজভী ভারতকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, দেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতর অবস্থা উন্নয়নে ভারত বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি মিয়ানমারে বাড়িঘর তৈরিতে ভারত সাহায্য করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ বজায় রেখেছে।
সরণ বলেন, আমরা পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে পারছি এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দেশে স্থান দিয়ে বাংলাদেশ কতটা মানবিকতা দেখিয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে তার বোঝা বয়ে চলার পথকে সহজ করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছে। তিনি আরও বলেন, এই সমস্যায় ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে আছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮২৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ