শিক্ষার্থীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধরের মামলায় সৈয়দ মোহাম্মাদ ওসমান গনি (৩০) নামের এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (২১ মার্চ) রাতে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রিফলতলা উত্তরপাড়া হাজী আরিফ কেরাতুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসা এলাকা থেকে ওই শিক্ষককে আটক করে রামপাল থানা পুলিশ।
এর আগে সন্ধ্যায় মারধরের শিকার শিক্ষার্থী মো. শুকুর শেখের বাবা মো. মনি শেখ বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আহত শিক্ষার্থী শুকুর (১১) শ্রিফলতলা উত্তরপাড়া হাজী আরিফ কেরাতুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসার নজরানা (দেখে দেখে কোরআন পড়েন) বিভাগের শিক্ষার্থী।
থানা পুলিশ জানায়, রোববার (২১ মার্চ) সকালে পড়াশুনার না করার অপরাধে মাদরাসার ফ্যানের রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে শিক্ষার্থী মো. শুকুর শেখকে মারধর করেন ওই শিক্ষক। বিষয়টি জানাজানি হলে সন্ধ্যায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা থানায় মামলা করেন। শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। সে বাড়িতে রয়েছে।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ সামসুদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীকে মারধরের মামলায় মাদরাসা শিক্ষক সৈয়দ মোহাম্মাদ ওসমান গনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘এখানে শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার দর্শন অনুযায়ী গড়ে ওঠেনি। নানা ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত। কেউ কেউ মনেই করেন কিছুটা মারপিট সুশিক্ষার জন্য দরকার আছে। আর কওমি মাদ্রাসাগুলো যেহেতু সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই তাই তারা সরকারের নির্দেশও মানতে চায় না।’’
তিনি বলেন, ‘ওস্তাদের মার খেলে ওই জায়গাটা বেহেশতে যায়- এটা যদি হয় চিন্তা তাহলে মারপিট থামবে কীভাবে? তার মতে, সামাজিক এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই শিশুদের ধর্ষণ করেও কেউ কেউ রেহাই পেয়ে যান।
এদিকে দেশের স্কুল-মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন রোধে নজরদারি বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। আইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে মাদ্রাসা নামক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি এরকম কিছু ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুললে হাইকোর্ট এমন নির্দেশনা দিয়েছে।
আদালতের নির্দেশনাসমূহ:
- দেশের সকল মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে হবে।
- মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের মারধর করা, ভয়ভীতি দেখানো যাবে না এমন সরকারি নির্দেশনার বাস্তবায়ন।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা বোর্ড বিষয়টি নজরদারি করবে, এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনশৃঙ্খলা
- বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
- শিশুটির নিরাপত্তা বিধানের অংশ হিসেবে তার বাড়িতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে হবে।
- নির্যাতনের শিকার শিশুটির পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় সেটি মনিটরিং এ রাখা।
- নির্যাতনের ঘটনা যাতে শিশুটির ভবিষ্যতের ওপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সেজন্য জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। মানবাধিকার কর্মীদের অনেকে আবার মনে করেন, মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব বোর্ড বা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সেখানেও ঘাটতি আছে। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭১৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতা করুন।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ