লাহোরের একটি প্রখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান স্থগিত করে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।
দ্য লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স (এলইউএমএস) ২৩ থেকে ২৭ মার্চ কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য অনলাইন সম্মেলন আয়োজন করে। সম্মেলনটি আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটিজ এন্ড সোশ্যাল সায়েন্স স্কুল। সম্মেলনটির শিরোনাম দেয়া হয়, ‘যুদ্ধ, সহিংসতা এবং স্মৃতি: ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ৫০ বছর উদযাপন’।
যা হোক, এ সপ্তাহের শুরুর দিকে অনুষ্ঠানটি কোন প্রকার কারণ না দেখিয়ে স্থগিত করা হয়। যা কিনা বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যার মধ্যে সবচে’ উঁচু গলায় যে প্রশ্নটা শোনা যাচ্ছে তা হল, পাকিস্তানের একাডেমিক মত প্রকাশে স্বাধীনতার সংকট। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনও এ প্রসঙ্গে কিছু বলা থেকে বিরত আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক হাসান জাভেদ বলেন, যখন সম্মেলনটির জন্য ২৩ মার্চ নির্ধারণ করা হয়, তখন থেকেই এ নিয়ে একটা উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করে। কেননা ২৩ মার্চ আমাদের সংবিধান প্রণীত হয় এবং ১৯৫৬ সালের এই দিনে, প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পাকিস্তান।
২৩ মার্চকে উগ্র দেশপ্রমকে প্রশ্রয় দেয়ার আরও একটি সুযোগ হিসেবে না দেখে, বরং রাষ্ট্র ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন থেকে কোন শিক্ষা নিয়েছে কিনা সেদিকে নজর দেয়াটা অধিক সঙ্গত হবে, জাভেদ টুইট করেন।
উল্লেখ্য, এলইউএমএস-কে পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমসারির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাখা হয়। পাশাপাশি ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং’-এ এটি দেশটির সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন পাকিস্তান
এলইউএমএস সম্মেলন বাতিল হবার পর থেকে বেশ কিছু বিশিষ্টজন সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
“অহেতুক সমালোচনার কারণে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭১ সালের শোকাবহ স্মৃতির স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠান বাতিল করছে, এটা কোনও ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা বারবার সকল বিতর্ক দমন করে আসছি। আমরা কীভাবে এমন একটি অসহনীয় জাতিতে বদলে গেলাম, এটা আমাদের নিজেদের কাছে প্রশ্ন করতে হবে”, বলেন পাকিস্তানি দৈনিক ডনের সাবেক সম্পাদক আব্বাস নাসির।
তিনি বলেন, ‘যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, বেশ লজ্জাজনক এই সিদ্ধান্ত।’
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে যে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তা পাকিস্তানের একাডেমিক পাঠ্যসূচিতে প্রায় অনুপস্থিত।
মন্তব্যকারীদের মতে, একাডেমিক মত প্রকাশের এই কণ্ঠরোধ বুঝিয়ে দেয়, রাষ্ট্র ১৯৭১ সালের যুদ্ধ সম্পর্কিত যেকোন অস্বস্তিকর মন্তব্য, সম্মেলন বা অনুষ্ঠান যাই হোক, তার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করবে।
প্রসঙ্গত, বাতিলকৃত এলইউএমএস সম্মেলনটিতে যুদ্ধের বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা ছিল। আলোচনার বিষয়ের মধ্যে ছিল, ‘হৃদয়ে অনিবারিত আগুন: ১৯৭১ সালের সহিংসতা’, ‘রাজনৈতিক প্রামাণ্যচিত্র: চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির মধ্যে সম্পর্ক’ এবং ‘৭১: পাকিস্তানের অতীত এবং যা বলতে বারণ’।
সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী পাকিস্তান
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সব ধরনের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় পাকিস্তান। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডা. আরিফ আলভি বাংলাদেশে নিযুক্ত সে দেশের হাই কমিশনারকে বলেছেন, পাকিস্তানের জন্য এই সম্পর্ক খুবই মূল্যবান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
বুধবার ডন জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের হিমশীতল সম্পর্কের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নেওয়া নানা ধরনের পদক্ষেপের কথা প্রেসিডেন্টকে জানান ইমরান সিদ্দিকী।
ডন বলছে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব-পর্যায়ের পরামর্শক এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনও রয়েছে। তবে এসবের বেশিরভাগই স্থগিত রয়েছে। গত প্রায় ১২ বছর ধরে বন্ধ থাকা পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক দ্রুতই আবার শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডন বলছে, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি হাই-কমিশনার সিদ্দিকীকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দুই দেশের পারস্পরিক সুবিধা লাভের জন্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক, ব্যবসায়িক সহযোগিতা এবং জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ক্রীড়াসহ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিনিময় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪২৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতা করুন।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ