খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিদর্শক তৈমুর ইসলামের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বিহর্ভূত ব্যয় ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে দুদক খুলনার উপ-পরিচালক মোঃ শাওন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তৈমুর ইসলাম তার চাকরিজীবনে ৭৭ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৬ টাকা জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন-যা তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। এরমধ্যে ২০০২ সালে ডিএমপিতে চাকরি করার সময় সাময়িক বরখাস্ত হন এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে চাকরি ফিরে পান। এ সময় তিনি অ্যাপার্টমেন্ট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নামক কোম্পানিতে চাকরি করেন।
২০১৫-১৬ সালে তিনি স্ত্রীকে ৬৫ লাখ টাকা দান করেন।
তার পিতা খুলনার টুটপাড়া এলাকায় ৩৭ শতক জমি ক্রয় করে ৪ তলা বাড়ি নির্মান করেন। জমি থেকে ১৩ শতক জমি ও একটি ফ্লাট তার পিতা তাকে দান করেছেন। যেসব জমি ও ফ্লাট তার পিতা তাকে দান করেছেন সেগুলোর মূল্য তিনিই প্রদান করেছেন। এসব অর্থ গোপন করার উদ্দেশ্যেই তিনি এগুলো দান হিসেবে দেখিয়েছেন। ডুমুরিয়ায় ৬২ শতক ক্রয় করে জমিতে একটি দোতলা ভবন তৈরি করেছেন। সম্পদ বিবরনীতে ১২ লাখ টাকা ব্যয় দেখালেও আয়কর নথিতে ২০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। ২০১১ সালে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি টয়োটা এলিয়ন গাড়ি ক্রয় করেন। যা রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয়ের অর্থ আয়কর নথিতে দেখাননি। ফলে এটিও অবৈধ আয়। আয়কর নথি পর্যালোচনায় তার ৫১ লাখ ৪২ হাজার ৫৩০ টাকা আয়ের থেকে ব্যয় বেশি পাওয়া যায়।এ টাকাও তার অবৈধ আয় হিসেবে ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০১১-১২ সালে দুবার থাইল্যান্ড ভ্রমণে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। এসব খরচের হিসাবও তিনি আয়কর নথিতে দেখাননি। এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের কারণে মানি লন্ডারিং আইনের ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) পুলিশ পরিদর্শক তৈমুর ইসলামের বিরুদ্ধে ৭৭ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৬ টাকা জ্ঞাত আয় বিহর্ভূত ব্যয় ও অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদকে স্থানান্তর, হস্তান্তর, রূপান্তর করার দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতি রোধে বিভাগীয় শাস্তির বিধান আছে। শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। এর পরেও থামছে না অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের অপকর্ম। পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তার উল্টো চিত্র। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের দেয়া এক তথ্যে জানা গেছে, প্রতি বছর পুলিশ সদস্য থেকে কর্মকর্তা পর্যন্ত অনেকেরই সাজা হয়। প্রতি বছর পুলিশ কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি পুলিশের সাজা হয়। এ ছাড়াও ইন্সপেক্টর ও সহকারী পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের অনেকের সাজা হয়। কিন্তু এর পরেও কথা থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘুষ বাণিজ্যে পুলিশের ভূমিকা বিষয়ে দেশের প্রতিটা মানুষই জ্ঞাত আছেন। থানা পুলিশ জনগণের টাকায় আইন রক্ষার্থে ও অপরাধ দমনে প্রতিষ্ঠিত হলেও আদতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়েই পুলিশের কাজ করতে দেখা যায়। মামলার নামে থানাগুলোতে যে ঘুষ বাণিজ্য ঘটে সাধারণ মানুষ এখন টাকার অভাবেও মামলা করতে থানায় যাচ্ছেন না। টাকার প্রসঙ্গ বাদ দিলেও পুলিশের যে হয়রানি ও অসদাচরণ এতে পুলিশের ওপর থেকে জনগণের একরকম বিশ্বাস উঠে গেছে। প্রায় প্রতিটা পুলিশই আয় বহির্ভুত উপার্জন করে থাকেন বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে একেরপর এক বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ওঠায় পুলিশের ভূমিকা এখন নেতিবাচক চরিত্রে রুপ পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা মামলা হলেও যথাযথ ব্যবস্থার অভাবে পার পেয়ে যান বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২০৯
আপনার মতামত জানানঃ