- সি. অরিস মহামারি আকারে ছড়ালে তার পরিণতি হবে করোনার চেয়ে ভয়াবহ।
- বিশ্বজুড়ে ১ বছরেই প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
- সিডিসি’র মতে, এই ছত্রাকে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকই ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
- মূলত শরীরের ক্ষতস্থান থেকে সংক্রমণ ঘটে সি অরিসের।
- সি. অরিস বাজার চলতি সমস্ত ওষুধ প্রতিরোধী।
- সি. অরিস সংক্রমণরোধী ভাল ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে।
এখনও করোনা ভাইরাসে তটস্থ বিশ্ব। বিভিন্ন দেশে দৈনিক সংক্রমণও বাড়ছে নতুন করে। আর এসবের মধ্যেই ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী এক সুপারবাগের সন্ধান পেয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অনুরাধা চৌধুরী এবং তার সহকারীরা। করোনা ভাইরাসের আবহে তৈরি হওয়া এটি এক ধরনের নতুন ভয়াবহ সুপারবাগ, যা এক বিশেষ ধরনের ছত্রাক। পোশাকি নাম ‘ক্যানডিডা অরিস’ বা ‘সি. অরিস’।
কী এই ক্যানডিডা অরিস (C. auris)?
১০ বছর আগে এর সন্ধান পাওয়া যায়। ক্যানডিডা অরিস বা সি. অরিস হচ্ছে এক ধরনের ইস্ট বা ফাঙ্গাস বা ছত্রাক যা মানব দেহে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
ক্যানডিডা ছত্রাক আমাদের ত্বকে কোন ধরণের ক্ষতি না করেই বসবাস করে। এটি আমাদের শরীরে রক্তস্রোত বা ফুসফুসে চলে গেলে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
ক্যানডিডা অরিসে সংক্রমণ বেশ মারাত্মক। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ এবং ত্বকেও সংক্রমণ ঘটায়। এই ছত্রাক সাধারণত ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় এর সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে।
সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে
সুপারবাগ আবিষ্কারের গবেষণাটি গত ১৬ মার্চ এমবায়ো জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অনুরাধা চৌধুরীর নেতৃত্বে এক দল গবেষক বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপের আটটি প্রাকৃতিক স্থান থেকে সংগ্রহ করা ৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এই সুপারবাগের সন্ধান পেয়েছেন।
সমুদ্রতীরের বালুকাবেলা, প্রবাল প্রাচীর, পাথুরে এলাকা, লবণাক্ত জলাভূমি ও ম্যানগ্রোভ বন থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মূলত সমুদ্রতটের বালি এবং লবণাক্ত জলাভূমি থেকে প্রাণঘাতী এই সুপারবাগের অস্তিত্ব মিলেছে।
গবেষক দল দুটি স্থানের নমুনায় সি. অরিসের সন্ধান পেয়েছেন। এর একটি স্থানে মানুষের চলাচল কম হলেও অপর একটি স্থানে মানুষের সমাগম রয়েছে। গবেষকরা বলছেন এটি মহামারি হয়ে ওঠার যথাযথ পরিস্থিতি রয়েছে। আর মহামারি হয়ে উঠলে বিশ্বজুড়ে ১ বছরেই প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
কেন ভয়াবহ এই সুপারবাগ?
গবেষক দলের প্রধান ডা. অনুরাধা চৌধুরী জানান, সমুদ্র তীরে পাওয়া সি. অরিস একাধিক ওষুধ প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া হাসপাতালে যে ধরনের সি. অরিস দেখা যায় তার সঙ্গে জলাভূমিতে পাওয়া ছত্রাকের মিল রয়েছে।
গবেষকরা দেখেছে, লবণাক্ত এলাকায় যেসব সি. অরিস পাওয়া গেছে তা একাধিক ওষুধ প্রতিরোধে সক্ষম এবং বেশি তাপমাত্রায় খুব ধীর গতিতে বাড়ে।
সুপারবাগ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সি. অরিস ক্ষতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করার আগে কয়েক দিন পর্যন্ত ত্বকে থাকতে পারে। একবার রক্তে প্রবেশের পর এটি মারাত্মক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। আর এ থেকে পচন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, সুপারবাগ রক্তে মারাত্মক সংক্রমণের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যাদের মূত্রনিষ্কাশন যন্ত্র কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্র ব্যবহারের দরকার পড়ে তাদের ক্ষেত্রে সুপারবাগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
বাংলাদেশে এই ছত্রাকের অস্তিত্ব
প্রাণঘাতী ছত্রাক ক্যানডিডা অরিসের (সি. অরিস) অস্তিত্ব থাকতে পারে বাংলাদেশে। এই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে একজন বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসেন। আবার ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে এসে একজন আমেরিকানের শরীরে এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ে।
এই ওষুধ প্রতিরোধী ছত্রাকটি দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ অ্যান্ড প্রিভেনসন বিভাগ এই ছত্রাককে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে বলেছে। একই সঙ্গে সি. অরিসে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত চিহ্নিত করে হাসপাতালে রেখে সেবা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। যেন এটি ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
স্বস্তির কথা
২০০৯ সালে জাপানে প্রথম ‘সি. অরিস’-এর অস্তিত্ব মেলে। পরবর্তীকালে ব্রিটেন-সহ কয়েকটি দেশের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় গবেষকেরা এর খোঁজ পেলেও ভারতে এই প্রথম দেখা গেল ‘সি. অরিস’।
তবে বাল্টিমোরের জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ-এর ‘মলিকিউলার মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি’ বিভাগ জানিয়েছে, এখনও এই সুপারবাগ মানুষ বা অন্য জীবদেহের উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারেনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩৫
আপনার মতামত জানানঃ