জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড- বিচার ব্যবস্থার এই বাগধারাটি চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে খেটে যায়। সেখানকার বিচারপ্রার্থীরা বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা পড়েছেন দীর্ঘসূত্রতার কবলে। আদালত ও বিচারক সংকট, হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ ও সাইবার ট্রাইব্যুনাল না থাকাসহ নানা কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গত জুন পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজারে। ওদিকে বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতসহ অন্তত ১৪টি আদালতে বিচারক নেই বছরের পর বছর। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একজন বিচারক চার্জে দায়িত্ব পালন করছেন একাধিক আদালতের। এ অবস্থায় আবার প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে মামলাজট। এই যখন বাস্তবতা, তখন বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ যে কত চরমে উঠেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মামলা নিষ্পত্তির জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে বছরের পর বছর। এতে শুধু যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা নয়; মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিও যোগ হচ্ছে আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে।
দ্রুত বিচার পাওয়া বিচারপ্রার্থীর অধিকার নিশ্চয়ই। অথচ আমাদের বিচার ব্যবস্থার নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কারণে এই অধিকার তারা ভোগ করতে পারছে না। চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থীদের দুর্দশা কীভাবে লাঘব করা যায়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।
অবশ্য বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বেশকিছু প্রস্তাবনা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি।
এ সংস্থা চিঠিতে জানিয়েছে, বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ করতে হবে; শূন্যপদ পূরণ করতে হবে; আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ ও সাইবার ট্রাইব্যুনাল স্থাপনে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আশা করব, চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থীদের কথা চিন্তা করে এসব বিষয়ের দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
চট্টগ্রামের বিচার ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিচারকের অভাবই এর মূল সমস্যা। চট্টগ্রামের জজশিপের ১৪টি আদালতে বিচারকের পদ শূন্য রয়েছে। ওদিকে মহানগর হাকিম আদালতে ৩৫ হাজার ১৫৯টি মামলার বিপরীতে বিচারক রয়েছেন মাত্র ৮ জন।
এ অবস্থা বিরাজমান প্রায় প্রতিটি আদালতের ক্ষেত্রে। আমরা মনে করি, বিচারক নিয়োগের বিষয়টিই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। চট্টগ্রামের বিচার ব্যবস্থাকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সোর্স : যুগান্তর, পৃষ্ঠা ৪ / ২৯ অক্টোবর ২০২০
আপনার মতামত জানানঃ