বছর বছর বেড়েই চলছে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা। যার কারণে দেশের বিচারালয়ের মামলার জট এখন মহাজটে পরিণত হয়েছে। মামলার ভারে জর্জরিত আদালতে প্রতিদিনই জমা হচ্ছে নতুন নতুন মামলা।
দেশের সব অধস্তন আদালতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩২৬টি মামলা। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮টি। আর দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৭ হাজার ৭৭৮টি। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশের মামলার তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই সময় সারা দেশে বিচারাধীন ছিল ৪০ লাখ ২১ হাজার ৭৬৩টি মামলা, যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১৬ হাজার ৮৫১ এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৫ লাখ ২২ হাজার। আর ৬৪ জেলার আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৯১৩।
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সারা দেশের আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫৬টি । এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৪ হাজার ৯৪১, রাজশাহী বিভাগে ৭১ হাজার ৫৭৯, খুলনা বিভাগে ৮৫ হাজার ৮৭০, বরিশাল বিভাগে ৪২ হাজার ৬৭০, সিলেট বিভাগে ২১ হাজার ৬৩১, রংপুর বিভাগে ১৯ হাজার ৯৮৪ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছে ৬৫ হাজার ৬৫৭টি মামলা।
দেশের সব অধস্তন আদালতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩২৬টি মামলা। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮টি। আর দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৭ হাজার ৭৭৮টি।
এ ছাড়া পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সারা দেশের আদালতে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলার মধ্যেও ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫২টি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৭১ হাজার ৬০, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ হাজার ২৬৯, খুলনা বিভাগে ২৯ হাজার ৮৮৭, বরিশাল বিভাগে ৯ হাজার ৯৯২, সিলেট বিভাগে ১৩ হাজার ৪৯৭, রংপুর বিভাগে ৩৪ হাজার ৯৩৫ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছে ৯ হাজার ৩৫৬টি মামলা।
এর আগে ২০০০ সালের আগে থেকে বিচারাধীন মামলার তালিকা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এতে দেখা যায়, ২২ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলছে ৫ হাজারের বেশি মামলা, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মামলাজট নিরসনের লক্ষ্যে পাঁচ বছরের অধিক পুরোনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করতে ২০১৮ সালে সারা দেশের নিম্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি বিচারপ্রার্থীদের প্রত্যাশা। ফলে মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধিসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচ বছরের অধিক পুরোনো মামলা নিষ্পত্তি করে ক্রমবর্ধমান মামলাজট নিরসনের বিকল্প নেই।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আদালতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলা নিষ্পত্তি হতে বিলম্ব হচ্ছে। রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ ও সম্পত্তি যারা লুট করেছে, তাদের বিচার দ্রুত করতে হবে। এদের অধিকাংশই সাজা পায় না। ফলে অপরাধও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা প্রায়ই মামলাজট নিরসনে কথা বলে থাকেন। এটা দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হতে হবে। সে ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে বিচারক ও দুর্নীতি মামলার বেঞ্চ প্রয়োজনে আরও বাড়াতে হবে। অপরাধের বিচার বিলম্ব হওয়ায় সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ