গত ৫ বছরে সারা দেশের থানাগুলোতে ২৬ হাজার ৬শ ৯৫টি ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের হয়েছে গত দুই বছরে। বুধবার হাইকোর্টে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের করা একটি রিটের জবাবে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে বলে বুধবার (৩ মার্চ) সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে বুধবার এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনে হাইকোর্ট আগামী ২৩ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান ও অ্যাডভোকেট শাহিনুজ্জামান শাহিন।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের প্রতিবেদন তুলে ধরে আইনজীবী বলেন, ‘হাইকোর্টের ইতিপূর্বের রায়ের নির্দেশনা অনুসারে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর এই সেল গঠন করা হয়। হাইকোর্টের তিনটি রায় ছিল। এসব রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ আদালতের আদেশের পরই তা করা হয়েছে।’
ধর্ষণের মামলায় সালিশ করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষনার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনে হাইকোর্ট গতবছর ২১ অক্টোবর এক আদেশে ধর্ষণের ঘটনায় গত ৫ বছরে সারা দেশে থানা বা আদালতে কতগুলো মামলা দাখিল হয়েছে তার তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি, বিচার শুরুর পর থেকে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত একটানা বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হাইকোর্টের দেওয়া আগের নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
রুলে ধর্ষণের ঘটনায় অর্থের বিনিময়ে সালিশের মীমাংসার উদ্যোগ প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের চারমাসের মধ্যে এ রিপোর্ট দিতে বলা হয়। অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করা হয়। রুলে ধর্ষণের ঘটনায় অর্থের বিনিময়ে সালিশের মীমাংসার উদ্যোগ প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরে পুলিশ সদর দপ্তরের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে ধর্ষণ মামলার পরিসংখ্যান পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ৪৩৩১টি, ২০১৭ সালে ৪৬৮৩টি, ২০১৮ সালে ৪৬৯৫টি, ২০১৯ সালে ৬৭৬৬টি এবং ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৬২২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রিটে তিনটি মামলায় ইতিপূর্বে উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনার প্রসঙ্গ উল্লেখ রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, কোনো ধরনের দেরি না করে ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ এমন প্রতিটি আমলযোগ্য অপরাধ যেখানেই ঘটুক না কেন, তার তথ্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ১৮ দফার নির্দেশনায় বলা হয়, ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের সব ঘটনায় বাধ্যতামূলকভাবে কেমিক্যাল বা ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। ডিএনএ পরীক্ষা ও অন্যান্য পরীক্ষার নমুনা নির্ধারিত ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাব বা ডিএনএ প্রোফাইলিং সেন্টারে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাঠাতে হবে।
রিটকারীর আইনজীবীর ভাষ্য, ধর্ষণের ঘটনায় আইনি বিধিবিধান অনুসরণ ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষা এবং যথাযথ প্রতিকার নিশ্চিতে ইতিপূর্বে হাইকোর্ট তিনটি মামলায় রায় দেন। তবে রায়ের নির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখা যায় না। এমন প্রেক্ষাপটে রিটটি করা হয়।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ধর্ষণের মামলা ১৮০ কার্যদিবসে বিরতিহীনভাবে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ আলী আকবরকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বা তার প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার নীচে নয়) এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পদ-মর্যাদার নীচে নয়)।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ