নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সুরক্ষা দিতে গত এক বছরে বাংলাদেশে বড় কোনো আইনি সংস্কার করা হয়নি। ফলে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর আইনি সুরক্ষা পাওয়ায় বিশ্বের তলানির দেশগুলোর একটিই রয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে মাত্র আফগানিস্তান। ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় মাত্র অর্ধেক আইনি সুরক্ষা পান এ দেশের নারীরা।
বিশ্বব্যাংকের ‘উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এমন চিত্র উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৯০টি দেশের নারীর কর্মক্ষেত্র ও ব্যবসা-বাণিজ্যের আইনি সুরক্ষার চিত্র তুলে ধরা হয়। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে মাত্র ১৭টি দেশ।
গত এক বছরে নয়টি দেশ নারী-পুরুষের সমতায় সবচেয়ে বেশি আইনি সংস্কার করেছে। এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল থাকলেও বাংলাদেশ নেই। সংস্কারে বেশি এগিয়ে যাওয়া ওইসব দেশের তালিকায় আছে সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ সুদান, সাওতুমে অ্যান্ড প্রিন্সেপ, বাহরাইন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, জিবুতি, জর্ডান ও তিউনিসিয়া।
আটটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এগুলো হলো কাজের জন্য বিচরণ-সুবিধা, কর্মপরিবেশ, বেতন-মজুরি, বিবাহ, অভিভাবকত্ব, উদ্যোক্তা, সম্পদ ও সরকারি ভাতা। এ আট সূচকের মধ্যে কাজ খোঁজার সূচকে বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের আইনি সমতা আছে। কাজ খুঁজতে নারীদের কোনো বাধা নেই। বাকি কোনো সূচকেই নারী-পুরুষের আইনি সমতা নেই। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বেতন-মজুরি ও ভাতা সুবিধার ক্ষেত্রে। বেতন-মজুরি এবং কর্মকালীন ও অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় ৪ ভাগের ১ ভাগ আইনি সুরক্ষা পান। এ দুর্বলতায় ওই দুটি সূচকে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। নারীরা আইনি প্রতিকার কম পান। নারীরা পুরুষের চেয়ে কম মজুরি পান, কর্মঘণ্টায় বৈষম্য আছে, পুরুষের তুলনায় নারীর কাজ পাওয়ার সুযোগ কম এবং বয়স্ক নারীরা অপেক্ষাকৃত কম রাষ্ট্রীয় সুবিধা পান।
সার্বিকভাবে বাংলাদেশ নারী-পুরুষের আইনি সুরক্ষায় ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্ট পেয়েছে। একই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে নেপাল, ৮০ দশমিক ৬। ভারত ৭৪ দশমিক ৪, মালদ্বীপ ৭৩ দশমিক ৮, ভুটান ৭১ দশমিক ৯, শ্রীলংকা ৬৫ দশমিক ৬, মিয়ানমার ৫৮ দশমিক ৮, পাকিস্তান ৫৫ দশমিক ৬ ও আফগানিস্তান ৩৮।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমাতে শক্তিশালী আইন নেই। ফলে ঘরের বাইরে এসে নারীরা কাজ করতে নিরাপদ বোধ করেন না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কোনো আইন করা হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের সূচকে অনুযায়ী, শতভাগ নারী-পুরুষের আইনি সমতা বজায় আছে মোট ১০টি দেশে। দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, পর্তুগাল ও সুইডেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীরা অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন বেশি। ফলে বেতন থেকে শুরু করে সব ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাদের। শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে ঠিক কিন্তু শিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণ খুব একটা বাড়েনি। অল্পশিক্ষিত নারীরা ছোট ছোট পদে কাজ করে। এসব পদের নারী শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই বৈষম্য করতে পারে। এক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষা এবং দক্ষতা দুটোই বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১১
আপনার মতামত জানানঃ