মিয়ানমারের সঙ্কট থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজে পেতে ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাস্তায় নেমে আরও বিক্ষোভ দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিরোধী প্রতিবাদকারীরা, জানিয়েছে বার্তা রয়টার্স।
প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় নেমে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, কর্তৃপক্ষের এমন হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও চলতি সপ্তাহের সোমবার দেশটির জান্তা বিরোধীরা বিশাল সমাবেশ ও সাধারণ ধর্মঘট করেছে। তারা ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি ও আটক অন্যান্যদের মুক্তি দাবি করেছে।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম এমআরটিভিতে প্রচারিত সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা এখন জনগণকে— বিশেষ করে আবেগপ্রবণ কিশোর ও তরুণদের প্ররোচিত করছে, যেখানে তারা প্রাণহানির শিকার হতে পারেন।
মায়ানমার সরকারের ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি নথি থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ( ২৫ ফেব্রুয়ারি) ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি মায়ানমার যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন; সম্ভবত মায়ানমারের সঙ্কট সমাধানে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করাই তার সফরের লক্ষ্য। মায়ানমার গেলে ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে যাওয়া প্রথম বিদেশি দূত হবেন মারসুদি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জান্তা সরকারের সঙ্গে কোনও চুক্তি হলে দেশটির গত নির্বাচন গুরুত্ব হারাতে পারে। ওই নির্বাচনে ভূমিধ্বস জয় পেয়েছিল সু চি-র দল এনএলডি। ফলে স্বভাবতই তার সফরকে ইতিবাচকভাবে নেবে না এনএলডি সমর্থকরা।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় (আসিয়ান) দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠকের আহ্বান জানায় মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। তবে, সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
মঙ্গলবার ( ২৩ ফেব্রুয়ারি) ইয়াঙ্গনে ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের সামনে কয়েকশত লোক জড়ো হয়ে ওই নির্বাচন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। মিয়ানমারভিত্তিক আন্দোলনকারী গোষ্ঠী ‘ফিউচার ন্যাশন অ্যালায়েন্স’ এক বিবৃতিতে বলেছে, রেতনোর ভ্রমণ ‘সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সমতুল্যই হবে’। গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, বিদেশি কর্মকর্তাদের ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের কমিটি সিআরপিএইচের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়কপ্রতিনিধি তিন লিন অং-য়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।
মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, রেতনো থাইল্যান্ডে আছেন আর তারপর ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও যেতে পারেন; কিন্তু কোন দেশ তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান মিয়ানমারের নতুন নির্বাচনের পক্ষে নয় বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে মিয়ানমারের উৎখাত হওয়া সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে সামরিক নেতাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অবিলম্বে দমন-পীড়ন বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া, সহিংসতা বন্ধ করা, মানবাধিকারকে সম্মান করা এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানোর আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আধুনিক বিশ্বে সামরিক অভ্যুত্থানের জায়গা নেই। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে তারাও মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২২৪০
আপনার মতামত জানানঃ