দিনাজপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের ভিডিও চিত্রটি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দুই বছর ধরে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে আসছিল দিনাজপুর সদর উপজেলার ২ নম্বর সুন্দরবন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন (৫০)। তিনি উপজেলার রামডুবি এলাকার শাহ মো. মমিরউদ্দীনের ছেলে। এবিষয়ে কোতোয়ালী থানায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিনজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলা করার ১০ দিন পরও আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় এবং প্রধান আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় এখন আতঙ্ক রয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মানিক (৪৮) ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দপ্তরি মো. হাফেজ (৪৮)।
মাদ্রাসাছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে তার মেয়েকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করেন ওই নেতা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার সময় থেকে বিভিন্নভাবে ওই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতো আনোয়ার হোসেন। একপর্যায়ে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এবং ওই ধর্ষণের ভিডিও চিত্রও ধারণ করেন। ওই ভিডিও চিত্র ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার গাড়িচালক ও মাদ্রাসার পিয়নের সহযোগিতায় মেয়েটিকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে ওই আওয়ামী লীগ নেতা। এসব কাজে ছাত্রীটি বাধা দিলে হুমকি দেন আনোয়ার হোসেন। দুই বছর ধরে এ পরিস্থিতি চলার পর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারে।
এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি কোতয়ালী থানায় আনোয়ার হোসেন সহ তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন মেয়েটির বাবা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দীন গতকাল বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলা দায়েরের পরদিনই ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। মাদ্রাসাছাত্রী বিচারিক হাকিমের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’
১০ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এ ব্যাপারে এসআই বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
সেই কিশোরীর বাবা গণমাধ্যমকে জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি মামলা করার ১০ দিন পরও আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় এবং প্রধান আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় এখন আতঙ্ক রয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আসামি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও সরকারদলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত বলে মামলার দশদিন পেরিয়ে গেলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা মনে করেন, সরকারদলীয় রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকলে স্থানীয় থানা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে তেমন পদক্ষেপ নিতে সাহস পান না। উল্টো প্রশাসনের সাথে তাদের এক গোপন সখ্যতা থাকে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। ফলে অপরাধ করেও তারা সহজে পার পেয়ে যান আর অভিযোগকারীরা থাকেন আতঙ্কে। এবিষয়ে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপসহ মানবাধিক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। অতি শীঘ্র অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার আহ্বান জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ