নোট-গাইড যে নামেই হোক, তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে চূড়ান্ত করা হয়েছে ‘শিক্ষা আইন ২০২০’-এর খসড়া। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে সহায়ক বই প্রকাশ করা যাবে। চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, দেশে বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টার চালাতে বাধা নেই।
জানা গেছে, শিক্ষা আইনে শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের নোট, গাইড নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সহায়ক বই প্রকাশ করা যাবে। শিক্ষকরা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট, কোচিং করাতে পারবেন না। তবে ফ্রিল্যান্সিং কোচিং চালাতে বাধা থাকবে না। মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘ বৈঠকের পর অবশেষে শিক্ষা আইন-২০২০-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ছোটখাটো বানান সংশোধন ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। শিগগিরই এটি মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হবে। এরপর ভাষাগত সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয় হয়ে জাতীয় সংসদে উত্থাপন হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এটি কার্যকর করা হবে।
প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
উপধারা ৩-এ বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোট বই বা গাইড বই কিনতে বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ দিলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এখতিয়ারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
উপধারা ৪-এ বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সহায়ক পুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে। প্রস্তাবিত আইনের ৩০ ধারার ১ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে অভিভাবকদের লিখিত সম্মতিতে স্কুল সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা যাবে।
খসড়া আইনটিতে আরো বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো প্রকার শারীরিক শাস্তি বা মানসিক নিপীড়ন করতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় ঘটলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের মঙ্গল বিবেচনায় অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে যৌক্তিকভাবে শাসন করা যাবে।
চাকরিপ্রত্যাশী, ভর্তিচ্ছু শির্ক্ষাথী কিংবা ইংরেজি দক্ষতা বাড়াতে আগ্রহীদের সহায়তা করতে যে কোচিং সেন্টারগুলো আছে, সেগুলো এই আইনের আওতায় পড়বে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
২০১০ সালের শিক্ষানীতির সঙ্গে মিল রেখে শিক্ষা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষানীতি সঠিকভাবে প্রণয়নের জন্যে শিক্ষা আইন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শিক্ষানীতিতেই। এর আগে একাধিকবার মতামত নেওয়ার পর খসড়া তৈরি হয় এবং একবার মন্ত্রিসভায়ও উপস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু নানা অসংগতির কারণে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আলোচনার পর প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সহায়ক বই, কোচিংসহ যে বিষয়গুলো নিয়ে এত দিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে সেই বিষয়গুলো রেখেই খসড়াটি চূড়ান্ত হয়েছে। এতে সরকারের অনুমোদন ও নিবন্ধন নিয়ে সহায়ক বই ও কোচিং চালানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। নোট-গাইড নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ ইতিবাচক। কিন্তু কোচিং-বাণিজ্য চালু রেখে নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে লাভ হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা প্রতিষ্ঠানেই হওয়া উচিত। যত দিন কোচিংয়ের ওপর নির্ভরতা থাকবে, তত দিন বিদ্যালয়ের পড়া বিদ্যালয়ে হবে না। তাই নোট-গাইড বন্ধের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারও বন্ধ করা উচিত।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ