প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি করেই এ মাছের চাহিদার একটি বড় অংশ মেটাতে হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে। তবে এবার বাংলাদেশ থেকে যেন প্রচুর ইলিশ ভারতে ঢোকে তার ব্যবস্থা করতে ফারাক্কা বাঁধে নতুন ‘নেভিগেশনাল লক’ তৈরির কাজ করছে দেশটি।
এই লক তৈরিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেডের অধীনস্থ এল অ্যান্ড টি জিওস্ট্রাকচার বলছে, ফারাক্কার নতুন ‘নেভিগেশনাল লক’ তৈরির কাজ শেষ হলে গঙ্গা নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে। বিশেষ করে ফারাক্কা থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ অবধি ইলিশের জোগান বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ গঙ্গার উজান বেয়ে চলে আসবে ভারতের দিকে।
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ফারাক্কা বাঁধের স্লুইসগেটটির জলস্তর যেখানে রয়েছে, এবার তার চেয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হবে জলস্তর। যার অর্থ স্লুইসগেট এত দিন যতটা খোলা থাকছিল, তার চেয়ে অনেকটা বেশি খোলা হবে এবং তা প্রতিদিন চার ঘণ্টার জন্য খোলা থাকবে। প্রতিদিন চার ঘণ্টার জন্য খোলা থাকবে। এর ফলে পদ্মা নদীর নোনা পানি থেকে গঙ্গার মিষ্টি পানিতে সাঁতার কেটে আরও বেশি ইলিশের চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গায় ইলিশ মাছের ডিম পাড়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা বাঁধের প্রথম নেভিগেশনাল লক তৈরির পরে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত ইলিশ মাছের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ফারাক্কায় নতুন লকটি চলতি বছর জুন থেকে খুলে দেওয়ার কথা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্তর দশকে পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ পর্যন্ত ইলিশ পেত ভারতের জেলেরা। নৌযানের চলাচল নিশ্চিত করতে ফারাক্কা বাঁধে নির্মাণ করা নেভিগেশন লকের কারণে বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে ইলিশের স্বাভাবিক চলাচল। ভারতে কম ধরা পড়তে শুরু করে সুস্বাদু এই মাছটি। নোনা পানির মাছ ইলিশ বর্ষা মওসুমে প্রজননের জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে মিঠাপানির নদীতে চলে আসে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী ধরে এই মাছটির ভারতের গঙ্গা নদী দিয়ে এলাহাবাদ পর্যন্ত পৌঁছানোর নজিরও রয়েছে। মূলত বাংলাদেশেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। অতিরিক্ত আহরণ ও জাটকা ইলিশ ধরার কারণে এক সময়ে পরিমাণ কমে আসলেও গত কয়েক বছরে জাটকা রক্ষায় সফলতা আসায় বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভারতে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই বাঁধটির নেভিগেশন লকে সংস্কার আনলো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
নতুন নেভিগেশনাল লক তৈরির ক্ষেত্রে আধুনিক ইলেকট্রো হাইড্রোলিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। এর সঙ্গে প্রতিটি লক গেটকে কন্ট্রোল রুম থেকে রিমোট কন্ট্রোল মারফত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। নতুন নেভিগেশনাল লকের দৈর্ঘ্য ২৫০ মিটার, উচ্চতা ২৫ মিটারের বেশি। এটি তৈরি হলে ২৮০ কিলোমিটার দূরের কলকাতা বন্দরও লাভবান হবে।
কলকাতা থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে ফারাক্কা বাঁধের নেভিগেশনাল এই লক তৈরি হলে কলকাতা বন্দরও প্রভূত লাভ করবে বলে মনে করছেন এল অ্যান্ড টি জিওস্ট্রাকচারের চিফ এক্সিকিউটিভ এস কানাপ্পান। তিনি বলেন, আমরা খুশি যে এই নেভিগেশনাল লক তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের দিয়েছে। এর ফলে গঙ্গার পরিবেশ এবং অভ্যন্তরীণ প্রাণীদের জীবনেরও পার্থক্য তৈরি হবে। সঙ্গে জাহাজ যাত্রার পথও হবে সুগম ও দ্রুত।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮১৯
আপনার মতামত জানানঃ