চুক্তি অনুযায়ী ইইউর নিকট করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ২৭ সদস্য রাষ্ট্রকে কোম্পানিটি প্রতিশ্রুত পরিমাণে ভ্যাকসিনের ডোজ সরবরাহ করতে না পারায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে সংস্থাটির দ্বন্দ্ব এখন চূড়ান্তে। এরই রেশ ধরে ইইউ টিকা রফতানিতে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী যে পরিমাণ টিকা ২৭-সদস্য দেশের ব্লকটিতে (ইইউ) সরবরাহ করার কথা, তাতে কাটছাঁট করা নিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে বিরোধের জেরে ইইউ এমন মনোভাব প্রকাশ করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
সব সদস্য রাষ্ট্রের জন্যই ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে ভ্যাকসিন সরবরাহে ধীর গতির কারণে সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছে তারা। সদস্যভুক্ত কয়েকটি দেশে ফাইজার-বায়োএনটেক টিকা সরবরাহে বিলম্ব ও কাটছাঁটের ঘোষণা দেওয়ার কারণে টিকাদান কর্মসূচি ধীরগতিতে চলছে। কয়েকটি দেশ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে। এর মধ্যেই গত সপ্তাহে ইইউকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ডোজ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
এমন অবস্থায় ওষুধ কোম্পানিটিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিশনার স্টেলা কিরিয়াকাইডস বলেন, নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো পদক্ষেপ নেবে ইইউ। এক টুইটার পোস্টে তিনি জানান, স্থানীয় সময় সোমবার (২৫ জানুয়ারি) তিনি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বক্তব্য তার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি এবং তাদের ব্যাখ্যায় স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে।
অসমর্থিত এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মার্চ নাগাদ ইইউ’র ২৭ সদস্য দেশকে ৮০ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহের কথা ছিল অ্যাস্টাজেনেকার।
স্টেলা জানান, পরবর্তী বৈঠকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে অনুরোধ করা হয়েছে। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুই পক্ষের মধ্যে আবারও বৈঠক হবে।
স্বাস্থ্য কমিশনার সতর্কতা জারি করে বলেছেন, ভবিষ্যতে ইইউয়ের অন্তর্ভুক্ত টিকা উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানকে তৃতীয় যেসব দেশে তারা টিকা রফতানি করতে চায়, সে বিষয়ে আগাম বার্তা দিতে হবে। তবে এ বিষয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোনো মন্তব্য করেনি।
অবশ্য গত সপ্তাহে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছিল, উৎপাদনসংক্রান্ত জটিলতার কারণে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোয় টিকার প্রাথমিক ডোজ প্রত্যাশার চেয়ে কম পরিমাণ হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, মার্চ মাসের মধ্যে ২৭টি দেশে আট কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি ঘাটতি ঠিক কী পরিমাণ হবে। তবে কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলছেন, ৩ কোটি ১০ লাখ টিকা সরবরাহ কমতে পারে।
ইইউর ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেয়নি। তবে এ মাসের শেষে টিকাটি অনুমোদন পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
করোনার টিকা রফতানি বিধি কঠোর করলে যুক্তরাজ্যে সরবরাহ হওয়া ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার ওপর প্রভাব পড়বে। ফাইজার বেলজিয়াম প্ল্যান্টে উৎপাদিত টিকা যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, ভ্যাকসিন সরবরাহকারীদের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে। সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমাদের ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের মাধ্যমে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চারটি অগ্রাধিকার গোষ্ঠীকে প্রথম ডোজ দেয়া সম্পূর্ণ হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০
আপনার মতামত জানানঃ