হামিদ-উজ-জামান : যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহী বিমানবন্দরের রানওয়ে ও লাইটিং সিস্টেম উন্নয়নে ৯১৮ জনমাস পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার (প্রায় ১৮ কোটি) টাকা। ‘যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহী এর রানওয়ে সারফেসে অ্যাসফল্ট উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এসব পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। পরামর্শক সবাই দেশি বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়িত হলে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত হবে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রশ্ন হল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ থাকা উচিত। কেননা দীর্ঘদিন ধরে তারা এসব কাজই করছে। তাহলে এখন কেন এত পরামর্শক নিতে হবে? তাছাড়া এ তিনটিই ছোট বিমানবন্দর। আর আন্তর্জাতিক ব্যস্ত বিমানবন্দরও নয়। এসব বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়ন ও লাইটিং সিস্টেমের জন্য কেন এত পরামর্শকের প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখা উচিত।
একনেকের জন্য তৈরি সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি নিয়ে ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি বা প্রজেক্ট এভালুয়েশন কমিটি) সভা। ওই সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কনসালট্যান্সি (পরামর্শক) বাবদ ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবিত পরামর্শক সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে। এ সমঝোতা স্মারকে পরামর্শকের সংখ্যা, অভিজ্ঞতা ও কাজের সময় অনুযায়ী ব্যয় বিভাজন উল্লেখ করতে হবে। এ সুপারিশ মেনেই এত জনমাস পরামর্শক চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, এটি টেকনিক্যাল বিষয় হওয়ায় হঠাৎ করে কোনো মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। তাছাড়া প্রকল্পটি এখনও আমার নজরে আসেনি। এত পরামর্শক কেন লাগবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, রানওয়ের কাজগুলো খুবই টেকনিক্যাল হয়ে থাকে। একটি বিমান যখন নামে তখন সেটির ওজন হয় প্রায় সাড়ে ৩শ’ টন। সেইভাবেই রানওয়ের উন্নয়ন করতে হয়। তাছাড়া এসব কাজ করা হয় সাধারণত রাতে। কেননা দিনে বিমান উঠানামা বেশি থাকে বলে কাজ করা সম্ভব হয় না। বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বেশিরভাগ পরামর্শক নেয়া হবে। তারা সারা রাত জেগে কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। তাছাড়া রানওয়ের কাজ করা হয় শুকনো মৌসুমে। ফলে কাজ শেষ করতে সময়ও লাগে অনেক। যেমন এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হতে ২ বছর লাগবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব পরামর্শকই থাকবেন দেশি।
একনেক বৈঠকের জন্য তৈরি করা সারসংক্ষেপে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি-সরকারি তহবিল থেকে ৪৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে ১১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। একনেকে অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
পিইসি সভায় আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষা করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পে প্রস্তাবিত তিনটি জিপের পরিবর্তে একটি জিপ, তিনটি পিকআপ, তিনটি অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি এবং ছয়টি মোটরসাইকেল ক্রয়ের সংস্থান রাখতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ গাড়ির প্রাক্কলিত ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে নির্ধারণ করতে হবে এবং মূল্য নির্ধারণের ভিত্তি ও গাড়ির স্পেসিফিকেশন ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) উল্লেখ করতে হবে।পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস একনেকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপ উল্লেখ করেছেন- যশোর, সৈয়দপুর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ে সারফেস অ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভার-লেকরণের মাধ্যমে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে যাত্রীসেবার মান উন্নত হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে যশোর, সৈয়দপুর ও শাহমখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহী অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত এবং গত প্রায় অর্ধশত বছরেরও অধিক সময় ধরে যশোর বিমানবন্দর একটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে পরিচালিত। এ বিমানবন্দরে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯টি যাত্রীবাহী বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। এ বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য-ওভার রানসহ প্রায় ৮ হাজার ৬০০ ফুট ও প্রস্থ-শোল্ডারসহ ১৮০ ফুট। বর্তমানে রানওয়ের বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের আয়ুষ্কাল বহু পূর্বেই শেষ হয়ে গেছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। এ বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য-ওভার রানসহ ৬ হাজার ৮০০ ফুট ও প্রস্থ-শোল্ডারসহ ১২০ ফুট। প্রায় চার দশক আগে নির্মিত এ বিমানবন্দরের রানওয়ে পেভমেন্ট এত অধিক সংখ্যক বিমানের রিপিটেড লোড বহন উপযোগী করে নির্মিত নয়। তাই গত কয়েক বছরে রানওয়ের সারফেস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রানওয়ের উপরিভাগের বিটুমিনাস সারফেস থেকে নুড়ি-পাথর উঠে আসাসহ ডিপ্রেসন ও ক্র্যাকের সৃষ্টি হচ্ছে।ওই সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, শাহ মখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহীর রানওয়ের দৈর্ঘ্য-ও বার রানসহ ৬ হাজার ৬০০ ফুট, শোল্ডারসহ প্রস্থ ১২০ ফুট এবং রানওয়ে সারফেস বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে আচ্ছাদিত। বর্তমানে এ বিমানবন্দরে দিনে ৪টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে এবং খুব শিগগিরই যাত্রীবাহী বিমানের সংখ্যা আরও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। নির্মাণের পর থেকে সুদীর্ঘ ৩ দশকে রানওয়ের উপরিভাগের বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের আয়ুষ্কাল নিঃশেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানের টপ সারফেস হতে প্রতিনিয়ত নুড়ি-পাথর উঠে আসাসহ মাঝে মাঝে আস্তরণও উঠে আসে।
আপনার মতামত জানানঃ