সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে) ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রীয় এ সংস্থার উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার বাদী হয়ে গত রোববার চারটি ও সোমবার অন্য মামলাটি করেন। আজ সোমবার(২৫ জানু) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
তিনি জানান, পাঁচটি মামলার মধ্যে একটি মামলা গতকাল দায়ের করা হয়েছে এবং আজকে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল যে মামলাটি দায়ের হয়েছে সেটির বাদী দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। তিনি গতকাল এ মামলার দুজনকে গ্রেফতার করেছেন। তারা হলেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক।
এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বোর্ডের সদস্যরা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার-পূর্বক প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং করেন।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাশেদুল হক, ৯ জন বোর্ড মেম্বার, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের আত্মীয়স্বজন ও সহযোগীসহ মোট ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।
মামলাগুলোর মধ্যে আনাম কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, মেসার্স বর্ণ এর নামে ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, রাহমান ক্যামিকেলস লিমিটেডের নামে ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং মুন এন্টারপ্রাইজের নাম ৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
এক মামলায় এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্নসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।সোমবার দুপুরে দুদক কার্যালয় থেকে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এই চার কোম্পানি হল- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ।
পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট।
এদিকে, দুপুরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পিকে’র কথিত বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে ৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন একই আদালত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ