আগামি ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। ওই দিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে। ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার(২৩ জানু) রাজধানীর কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল পরিদর্শন গিয়ে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান এ তথ্য দেন। তিনি জানান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে।
তিনি জানান, এর পরদিন ২৮ জানুয়ারি ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে প্রায় ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। যাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপর আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান শুরু হবে।
আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আগামী ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে অন্যান্য পেশার মানুষও থাকবে। সেখানে আরও ২৪ জনসহ মোট ২৫ জনের একটি প্রতিনিধিত্বশীল গ্রুপ থাকবে। সেই তালিকায় চিকিৎসক, নার্স, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিকসহ অন্য পেশার মানুষ যুক্ত থাকবে।’
তবে এই পরিকল্পনা পরিবর্তন হতে পারে জানিয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘অন্য হাসপাতালেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু করা হতে পারে। কিন্তু যে হাসপাতালেই হোক সেখানে প্রথম দিনে সিভিল সোসাইটির বিভিন্ন স্তরের ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকা দেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘সেখানে চিকিৎসক, নার্সসহ একজন করে শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, সিভিল সংগঠনের প্রতিনিধি, সাংবাদিকদের নেওয়া হবে। ক্রস সেক্টর থেকে বাছাই করে প্রথম দিন ২০ থেকে ২৫ জনকে এই টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ড্রাই রান বা টেস্ট হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালকে বাছাই করা হয়েছে। সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে, তাদের মধ্যে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা সেটা দেখা হবে।’
ইতোমধ্যেই গত ২০ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার দেওয়া অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে। ভারত সরকারের পাঠানো উপহারের কোভিড টিকার ২০ লাখ ডোজ এখন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইপিআই স্টোরেজে। দুয়েকদিনের মধ্যেই দেশে আসার কথা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৫০ লাখ ডোজের চালান। বাংলাদেশের কিনে নেওয়া তিন কোটি ডোজের ভেতরে ৫০ লাখ আসছে এ মাসের ভেতরেই। এই ৭০ লাখ টিকার ভেতরে ৬০ লাখ টিকা দেওয়া হবে প্রথম মাসে, দ্বিতীয় মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ, তৃতীয় মাসে দেওয়া হবে আবার ৬০ লাখ। প্রথম মাসে টিকা পাওয়াদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে তৃতীয় মাসে। আর এ হিসাবে ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা ইতোমধ্যে করা হয়ে গেছে। কিনে নেওয়া টিকা দেশে আসার পর ঢাকা থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস চুক্তি অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলাতে টিকা পৌঁছে দেবে।
স্বাস্থ্য সচিব জানান, ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনের জন্য সিরিঞ্জসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। টিকাদানকারীদের প্রশিক্ষণ শেষ পর্যায়ে, আগামী ৩০ জানুয়ারি এ প্রশিক্ষণ শেষ হবে। তারা ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষিত। টিকা নিয়ে বাংলাদেশ অভিজ্ঞ, পুরো বিশ্বেই প্রশংসিত।
এর আগে হাসপাতালের বাইরে কেন্দ্র হবে না জানিয়ে মো. আবদুল মান্নান বলেছিলেন, হাসপাতালের বাইরে কোনো কেন্দ্র হবে না, কারণ সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ভ্যাকসিন নেওয়া সবাই টেলিমেডিসিনের আওতায় থাকবে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচার করা হবে। প্রতি টিমে দুজন ভ্যাকসিনেটর ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন, যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে তাদের টেলিমেডিসিন সুবিধা দেওয়া হবে। রাখা হবে ফলোআপে।
এদিকে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেছিলেন, বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি ও টিকাদানের ব্যবস্থা রাখা হবে। সেক্ষেত্রে টিকার দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে। এর নীতিমালাও তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ