র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে বিএনপি। এরই মধ্যে সরকারের পুলিশ সংস্কার কমিটির কাছে এই সুপারিশ করেছে দলটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘র্যাব আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দনীয় হয়েছে। আর দেশের মধ্যেই তো র্যাব মানেই দানব। যত ধরনের খুন, জখম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড অধিকাংশই র্যাবের মাধ্যমে হয়েছে। সেজন্য এটাকে আমরা বিলুপ্ত করার জন্য সুপারিশ করেছি।’
এছাড়া, র্যাবের দায়িত্ব যাতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং থানা পুলিশ পালন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
পুলিশ সংস্কার কমিটির কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়া না হলেও বিএনপি নিজ উদ্যোগে প্রস্তাব জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সেবার সংস্কার এখন সময়ের দাবি।”
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “আমরা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের সুপারিশে পুলিশ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যবধান কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।”
র্যাব গঠন ও বিতর্ক
২০০৪ সালে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ওই বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এলিট ফোর্স র্যাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
মূলত দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন এবং আইনশৃঙ্খলার মানোন্নয়নে গঠন করা হয়েছিল র্যাব। আত্মপ্রকাশের পর র্যাবের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ে র্যাবের বেশ কয়েক জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তবে পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ই এই বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তখন আওয়ামী লীগ ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যার অভিযোগ তুলে র্যাব বিলুপ্তির দাবি করে।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের পর খুনের ঘটনায় র্যাবের সাবেক তিনজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হন। এই ঘটনাকে ঘিরে র্যাবের বিরুদ্ধে গুম, অপহরণের বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। এ সময় বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া র্যাব বিলুপ্তির দাবি তোলেন।
তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বাহিনী র্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, র্যাব এখন প্রতিষ্ঠিত একটা বাহিনী হিসেবে কাজ করছে এবং বাহিনীটির কেউ অন্যায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব এবং এর ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আপনার মতামত জানানঃ