বাংলাদেশকে ‘নিঃশর্তভাবে সাহায্য’ করে গিয়েছে ভারত, এক অনুষ্ঠানে এমন দাবি করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি মনে করেন, ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ‘ইতিবাচক এবং গঠনমূলক’ ধারায় অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার এশিয়া সোসাইটি এবং এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘ভারত, এশিয়া এবং বিশ্ব’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ভারতের প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাথে আমাদের সম্পর্ক ‘ইতিবাচক এবং গঠনমূলক’ ধারায় অব্যাহত থাকবে। এ খবর দিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন। এতে বলা হয়, জয়শঙ্কর বলেছেন- বিষয়টি এমন নয় যে, ভারত প্রতিবেশীর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের দিকটি শুধু যে ভারতের জন্য কাজ করছে না তেমন নয়, এক্ষেত্রে যেকোনো দেশই দায়ী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাকে নিঃশর্তভাবে সাহায্য করে গিয়েছে ভারত। তারপরেও সেখানের সরকার পরিবর্তনে দিল্লির জন্য সম্ভাব্য প্রতিকূল বলে মনে হচ্ছে। জয়শঙ্কর বলেছেন, প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব ধারা রয়েছে। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে আপনি কেবল এটি বুঝার চেষ্টা করবেন, এরপর অনুমান করে প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করতে পারেন। সব শেষে আমি আশাবাদী যে, প্রতিবেশীর সাথে আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতা বা পারস্পরিক সুবিধার বাস্তবতা প্রতিবেশীদের মধ্যে উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা করবে। বাস্তবতাগুলো নিজেরাই প্রকাশ করবে এবং এটাই আমাদের সম্পর্কের ইতিহাস।
জয়শঙ্কর আরও বলেছেন, কয়েক বছর পর পরই আমাদের অঞ্চলে কিছু না কিছু ঘটে। এতে লোকজন পরামর্শ দেয় যে, সেখানে একধরনের অপ্রতিরোধ্য পরিস্থিতি রয়েছে। পরে আপনি সেখানে সংশোধন আনতে নিজেদের প্রকাশ করতে শুরু করেন। তাই, আমি এই পরিবর্তনকে সেভাবেই নেব এবং আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে, এই উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের সম্পর্ক ইতিবাচক এবং গঠনমূলক ধারায় অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সরকার পরিবর্তনের আলোকে এসব মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ইস্যুতে জয়শঙ্কর বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের জন্য ভিন্নভাবে কাজ করেছি। গত এক দশকে আমরা সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প করেছি যা আমাদের উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক। সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই অঞ্চলের রসদ উন্নত হয়েছে। এতে উভয় দেশই এর থেকে অনেক কিছু অর্জন করেছে বলে মনে করেন জয়শঙ্কর।
আগস্টে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রক্তক্ষয়ী এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মার্কসবাদী নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। তিনি চীনপন্থী একজন নেতা। আর এ কারণে ভারত কিছুটা হলেও চিন্তায় পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দুই প্রতিবেশী দেশে ভারতপন্থী সরকারের পরাজয়ে দিল্লির কূটনৈতিক মহল কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন বলেও ধারণা তাদের।
আপনার মতামত জানানঃ