চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশে ভারতের প্রকৌশল (ইঞ্জিনিয়ারিং) পণ্য রপ্তানি কমেছে নয় শতাংশ। একইসঙ্গে ইতালি, কোরিয়া, নেপালের মতো দেশগুলোতেও কমেছে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত বিদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার এক-চতুর্থাংশই হলো প্রকৌশল পণ্য। খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এর ফলে সম্ভাব্য রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েছে।
ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (ইইপিসি) তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দেশটির লোহা এবং ইস্পাত রপ্তানি কমেছে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় প্রকৌশল পণ্যের শীর্ষ ২৫ রপ্তানি বাজারের মধ্যে ১৩ দেশেই চাহিদা কমতে দেখা গেছে। এ ধরনের বড় বাজারগুলোর মধ্যে ইতালিতে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, কোরিয়ায় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশে নয় শতাংশ রপ্তানি কমেছে ভারতীয় প্রকৌশল পণ্যের।
বাংলাদেশে রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ইইপিসি বলেছে, সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও সহিংসতার কারণে দেশটির আমদানি ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এর কারণে ভারতসহ সারা বিশ্বের রপ্তানিকারকরাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তবে, একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে ভারতীয় প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে ভারত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিরাতে ভারতের প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি ৪৪ শতাংশ এবং সৌদি আরবে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চলতি বছর কেবল এ দুটি দেশই ভারত থেকে ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রকৌশল পণ্য আমদানি করেছে। ভারত থেকে এর চেয়ে বেশি প্রকৌশল পণ্য কেনা একমাত্র দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র (৬১০ কোটি মার্কিন ডলার)।
ইলিশের সঙ্কট
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বাজারগুলোতে দেখা নেই ইলিশের। যা দুয়েকটা মিলছে, তারও দাম আকাশছোঁয়া। এর ফলে কমে গেছে বেচাকেনা। তাতে যেমন বিক্রেতারা হতাশ, তেমনি মনখারাপ ক্রেতাদেরও।
কলকাতা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর বাজারে প্রতিদিন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন বিক্রেতার সামনেই দেখা যাচ্ছে ইলিশ। ক্রেতারা আসছেন, তবে দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। চড়া দামের কারণে প্রিয় মাছ ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না কলকাতার ভোজনরসিক বাঙালিরা।
কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে আন্দোলন-সহিংসতা এবং পরবর্তী অস্থিরকার জেরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। কলকাতার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণেই ইলিশের দামে আগুন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে কলকাতার বাজারে ৫০০ গ্ৰামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ রুপিতে। এর থেকে একটু বড় ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০০ রুপি। তবে এক কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ রুপিতে, কোথাও এর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ রুপি পর্যন্ত।
চিকিৎসার জন্য ভারত যাওয়া কমেছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত
রাজনৈতিক সংকটের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। দেশটির চেইন হাসপাতালগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তারা এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
তাদের ধারণা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে মেডিকেল সম্পর্কিত বাণিজ্যের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ভারত বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রপ্তানি করে থাকে।
ফোর্টিস হেল্থকেয়ারের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।
তিনি বলেন, অনেক রোগী তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল অথবা স্থগিত করছেন। কোনো কোনো হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে অবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সবচেয়ে বড় হাসপাতাল চেইনের আন্তর্জাতিক বিপণন দলের একজন নির্বাহী জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা কমছে। তাছাড়া এই সংখ্যা আরও কমতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রোগী আসা কমেছে। সংকট শুরু হওয়ার পর প্রায় ২০ শতাংশ রোগী কমেছে।
অন্য একটি চেইন হাসপাতালের নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমাদের আয় কমেছে পাঁচ শতাংশ। তাছাড়া রোগী কমেছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন করে কোনো রোগী আসছে না বলেও জানান তিনি।
‘লালবাত্তি’ কলকাতা নিউমার্কেটে
পরিস্থিতি অস্বাভাবিক থাকায় পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পর্যটক প্রবেশে ধস নেমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিশেষ করে, কলকাতা নিউমার্কেট এলাকার হোটেল, জুতা, পোশাক, প্রসাধনী থেকে শুরু করে ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবহন ব্যবসায়ীরাও। অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশি পর্যটক কমে যাওয়ায় তাদের দোকানভাড়া তোলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার বাংলাদেশি পর্যটক কলকাতায় আসেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পর্যটক প্রবেশ অন্তত ৭০ শতাংশ কমে গেছে। তাতে লালবাত্তি জ্বলেছে কলকাতা নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে।
আপনার মতামত জানানঃ