বিদ্যুৎ রপ্তানি নীতিতে পরিবর্তন এনেছে ভারত। এতে করে তাদের দেশে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাবে না বাইরের দেশে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক সপ্তাহের মাথায় নতুন এমন এক নীতিমালা প্রণয়ন করে ভারত সরকার। দেশটির এমন সিদ্ধান্ত ভাবিয়ে তুলেছে সামিট গ্রুপকে। এ কারণে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলছেন বাংলাদেশে বিদ্যুৎখাতে আধিপত্য বিস্তার করা সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকারের নতুন নীতিমালা অনুসারে, যেসব প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে বাইরের দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করছিল, তারা এখন স্থানীয়ভাবেই তাদের বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। এতে করে বাংলাদেশসহ অন্য দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারবে না ভারতের আদানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো।
ভারতের এই নীতির কারণে ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আর বাইরে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারবে না। সেখানকার বিদ্যুৎ ভারতের জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হবে। যদিও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি করা হয় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনায় নিতে চায় সামিট। আজিজ খান বলেন, ‘নীতিমালার পরিবর্তনের পর আমাদের ভারতীয় অংশীদারেরা হয়তো ভারতেই বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী হবেন। তাই আগামীতে আমাদের কোম্পানি বাংলাদেশে সঞ্চালন লাইন তৈরিতে বিনিয়োগ করবে। এতে আমাদের আরও ঝুঁকি নিতে হতে পারে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামিট গ্রুপ বাংলাদেশে এক ডজনেরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনা করছে। কোম্পানিটি গত বছর টাটা পাওয়ার রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেডসহ ভারতীয় অংশীদারদের সঙ্গে এক হাজার মেগাওয়াট পুনর্নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নির্মাণ এবং উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে টাটা পাওয়ারের পক্ষ থেকে সামিটের পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
বাংলাদেশে প্রায় ৯৯ শতাংশ বিদ্যুৎই আসে জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। তাই কার্বন নিঃসরণ কমাতে এই খাতের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানো বাংলাদেশের জন্য জরুরি। কিন্তু জমির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনও সহজ নয়য়
আজিজ খান বলছিলেন, নীতিগত বিষয়গুলো স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগ বিলম্বিত করা এবং উচ্চঝুঁকির জন্য আর্থিক শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করাসহ বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে সামিট পাওয়ার।
ভারতের বিদ্যুৎ রপ্তানি নীতিমালায় পরিবর্তনের বিষয়ে আজিজ খান বলেন, ‘নীতিতে এ ধরনের দ্রুত পরিবর্তন সব সময়ই উদ্বেগের বিষয়। কারণ এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে।’
সামিট গ্রুপের প্রধান বলেন, বাংলাদেশে নতুন সরকারের কারণে নেপাল ও ভুটানে নির্মিত জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ভারত হয়ে যে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা ছিল, সেখানে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে। আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে তার কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।
আপনার মতামত জানানঃ