সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সাংবিধানিক ভাবে সরকার উপজেলা পরিষদকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে থাকলেও একের পর এক পরিপত্র দিয়ে উপজেলা পরিষদকে অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত নির্দেশাবলী সাংঘর্ষিক ও অসমাঞ্জস্য এর প্রধান অন্তরায়। প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ, যা নিশ্চিত হবে প্রতি ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে। কিন্তু কতিপয় কর্মকর্তাদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে তা বিঘ্নিত হচ্ছে। করোনা কালীন সময়ে উপজেলা পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ সরকারি সাহায্য এসেছে এগুলো কোথায় বিতরণ হয়েছে কারা পেয়েছেন তারা জানেন না।রবিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের হল রুমে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের সুনামগঞ্জ জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন এসোসিয়েশনের সদস্যরা।
এসময় তারা আরও বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির কোন ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগন নিবেন না। হাওরের ফসল রক্ষা, বাধ নির্মাণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন, গণশুনানিসহ বাঁধ নির্মাণের সকল পর্যায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত আসনের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের কোন মতামত ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে ফসল রক্ষা বাধ নির্মাণে তাদের কোন ধরনের সম্পৃক্ত না থাকায় তারা ফসল হানির কোন দায়ভার গ্রহণ করবেন না। এসময় তারা সরকারের কাছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংবিধান ও আইন বহির্ভুত ইনডেমনিটির ন্যায় জারীকৃত পরিপত্র সংশোধন, ভাইস চেয়ারম্যানদের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদের ১৭ টি বিভাগের ১৭টি স্থায়ী কমিটি কার্যকর করাসহ ৫ দফা দাবি জানান।
মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসোসিয়েশনের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রহিম, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমীন চৌধুরী, জগন্নাথপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আকাউর রহমান, দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তার আলম চৌধুরী, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন, জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ প্রমুখ। এছাড়া মতবিনিময় সভায় জেলার ৯টি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গণ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের সভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্বের চেতনায় সমৃদ্ধ সাংবিধানিক নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে আইন প্রবর্তন করলেও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রশাসনের একাংশ উপজেলা পরিষদ প্রর্বতন করেন। ইহা কার্যকর করতে ২০১১ সালে উপজেলা পরিষদ আইনকে সংশোধন করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনকে এক যুগ পার হওয়ার পরও কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে উপজেলা পর্যায়ে কার্যকর হয় নাই।
জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে উপজেলার প্রশাসনিক স্থরে কর্মকর্তাদের সম্বনয়ে এক যোগে কাজ করাই জনপ্রতিনিধিদের দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ উপজেলা এসোসিয়েশনের ৫ দফা দাবী উত্থাপন করেন চেয়ারম্যান নেতৃবৃন্দ। দফাগুলো হল- ১. উপজেলা পরিষদেও ১৭টি বিভাগে পরিপত্র সমুহ সংশোধন করা, ২. নির্বাচিত পরিষদের আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী ১৭ টি বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যানদের সভাপতিত্বে ১৭ টি স্থায়ী কমিটি কার্যকর করা, ৩. উপজেলা পরিষদেও প্রধান নির্বাহী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রশাসনিক বেতন ভাতাদি হস্তান্তর করা, ৪. উপজেলা পর্যায়ের সকল রাজস্ব ব্যয় চেয়ারম্যানের অনুমোদন ক্রমে সম্পাদন করা, ৫. সকল আনুষ্ঠানিক আইন প্রশাসনিকভাবে না করে, উপজেলা পরিষদ ব্যবহার কার্যকর করার জন্য লিখিত দাবী জানানো হয়।
আপনার মতামত জানানঃ