অতীত-ভবিষ্যৎ নিয়ে সকলেই কৌতূহলী। আজ যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, ১০০ বছর এগিয়ে বা পিছিয়ে গেলে কেমন হবে সবকিছু? এই ধরনের নানান প্রশ্ন প্রায়ই কম-বেশি সকলের মনেই রয়েছে। আর এই জল্পনা-কল্পনা থেকেই বারবার উঠে এসেছে টাইম ট্রাভেলের কথা।
টাইম ট্রাভেল কি বাস্তবেও সম্ভব কি-না সেই প্রশ্ন তুলতেই পারেন। সম্প্রতি এক গবেষণা বা নিবন্ধেরর দাবি শুনলে কিন্তু গায়ে কাঁটা দেবে। মিলিয়ন বছর পর মানুষ কেমন হবে, সেই বিষয়ে বিস্তর বলা হয়েছে তাতে। নিশ্চয়ই, ভবিষ্যতের পৃথিবীতেও মানুষ শারীরিকভাবে এখন যেমন আছে, তখন তেমন থাকবে না। মানসিক বদলও ঘটে যাবে নিশ্চিত।
কল্পবিজ্ঞান উপন্যাসের মতো মানুষ হয়ে উঠবে সাইবর্গ? সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজা হয়েছে বিবিসি আর্থের এক প্রতিবেদন। বিবিসি আর্থ ডটকম-এ নিবন্ধটি লিখেছেন বিজ্ঞান লেখক লুসি জোনস। তিনি বলছেন, মানুষ মিলিয়ন বছর পর দেখতে কেমন হবে সে বিষয়ে আমরা এখনই কিছু জানি না। তবে মিলিয়ন বছর পেছনের কথা নিশ্চয়ই জানি।
গত ১০ হাজার বছরে অভিযোজনের ফলে মানুষের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। লন্ডনের অ্যাংলিয়া রাস্কিন ইউনিভার্সিটির বায়োইনফরমেটিক্স-এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক টমাস মাইলুন্ড অনুমান করছেন, মানুষ সম্ভবত খাটো হতে থাকব। কারণ পরিবেশ বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে আমাদের গ্রহ উচ্চ জনবহুল হয়ে উঠবে। তখন দেহ কম শক্তি আহরণের জন্য অভিযোজিত হবে, ফলে উচ্চতা এখনকার চেয়ে কমে আসবে।
কম ঘনত্বে প্রচুর মানুষের সঙ্গে বসবাসের নতুন অবস্থার সঙ্গে তখন মানিয়ে নিতে হবে বলে মনে করেন মাইলুন্ড। তখন ঘন ঘন একের সঙ্গে অন্যের দেখা হয়ে যাবে। এর ফলে অনেক বেশি মানুষকে মনে রাখতে হবে। তখনই ‘মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট বসানোর মতো’ প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে।
বিজ্ঞান লেখক লুসি জোনস মনে করেন, বর্তমানে মানুষ তার কোনো অঙ্গ অকেজো হয়ে গেলে সেগুলো প্রতিস্থাপন করে। ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের ইমপ্লান্টকে পাশাপাশি, চোখে বসানো হতে পারে এমন এক ক্যামেরা বা কৃত্রিম চোখ যা অনেক অদৃশ্য রং এবং এর মাত্রাগুলো দেখতে পারবে।
বাস্তুসংস্থানবিদ এবং পরিবেশবিদ ড. জেসন এ. হজসন বলেন, এক মিলিয়ন বছর পর মানুষ দেখতে কেমন হবে, এ ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্পূর্ণ অনুমাননির্ভর। তবে অদূর ভবিষ্যতে এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা অনেকটা সম্ভব হবে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহার করে।
মিলিয়ন বছর পর মানুষ দেখতে কেমন হবে, এ প্রশ্নের বিপরীতে বিজ্ঞানীরা পরিবেশ, জিনগত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে বিভিন্ন অনুমান সামনে নিয়ে আসছেন। তবে পশ্চিমা বিশ্বে প্রযুক্তি-নির্ভরতা চিন্তার ক্ষেত্রকে একটি আকার দিচ্ছে। যে কারণে তাদের অনুমানের ভিত্তি হয়ে উঠছে প্রযুক্তি।
হজসন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, শহুরে এবং গ্রামীণ অঞ্চলগুলোর জিনগতভাবে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য দেখা দেবে। সাধারণত অভিবাসন গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে আসে। তাই শহরে জেনেটিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় হ্রাস পাবে। এটি বিশ্ব জুড়ে পরিবর্তিত হবে। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্যে গ্রামীণ এলাকার জিনে কম বৈচিত্র্য থাকবে। কারণ সেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাস করার ঐতিহ্য আছে।
কিন্তু শহর এলাকায় অভিবাসীদের কারণে জিনগত বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্র্য থাকে। আবার কিছু গোষ্ঠী বেশি বা কম হারে প্রজনন করছে। যেমন আফ্রিকার জনসংখ্যা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে, তাই তাদের জিনগুলো বিশ্বব্যাপী উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে বৃদ্ধি পায়। তবে যাদের ত্বকের রং হালকা, তারা কম প্রজনন করছে। হজসন ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী মানুষের ত্বকের রং আরও গাঢ় হবে।
আপনার মতামত জানানঃ