আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার পর এবার আলোচনায় এলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমিন। আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জা বেশ ক’দিন ধরেই স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মী, প্রশাসন ও আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের কর্তৃক অতিষ্ঠ হয়ে তাদের অনিয়ম অনৈতিকতা ও অপশাসনের বিরুদ্ধে জোর গলায় বিষোদগার করে আসছেন। এবার স্থানীয় আওয়ামী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মী, প্রশাসন ও আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মেয়র প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মির্জা ফখরুলের ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমিন।
তিনি সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, পৌর নাগরিকদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন বলে এবারের পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না তিনি।
অনেকটা দুঃখ করে বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রতিশ্রুতি আজও রক্ষা হয়নি! আর আমিও জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারিনি। আবার যদি মেয়র নির্বাচিত হই একই ঘটনা ঘটবে। এ কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
ফখরুলের ভাই আরও বলেন, সরকারি অর্থ বরাদ্দের জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র রায়ের কাছে গিয়েছি। তিনি আমাকে ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু কী এক অদৃশ্য শক্তির কারণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাইনি। আমি বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতার শিকার!
মেয়র হিসেবে তিনি সফল কিনা- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুলের ভাই বলেন, জনগণ তার বিচার করবেন। তিনি আরও বলেন, আমি জনগণকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী তহমিনা আখতার মোল্লাকে ভোটযুদ্ধে পরাজিত করে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচিত হন। এ শ্রেণির এই পৌরসভার ১১তম ক্ষমতার অধিকারী ফখরুলের ভাই। ফখরুল ও তার বাবা প্রয়াত মন্ত্রী মির্জা রুহুল আমিন ওরফে চোখা মিয়াও ঠাকুরগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কনিষ্ঠ ভাইয়ের স্থলে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ।
এদিকে নোয়াখালীর বসুরহাট (কোম্পানীগঞ্জ) পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বসুরহাট পৌরসভার তিন তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়র। আসন্ন বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনেও মেয়র পদে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি পুনরায় দলীয় মনোনয়নে চতুর্থবারের মতো মেয়র পদে প্রার্থী।
কাদের মির্জা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেই বেশ আলোচিত হয়েছেন। তিনি দলীয় এমপি ও নেতাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় দেশে, এমনকি বিদেশেও আলোচিত সমালোচিত। তার বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগ পরপর বেশ ক’বার ক্ষমতায় আসীন রয়েছ বলে দেশের সমস্ত নির্বাচনী পরিস্থিতি এমনি হয়ে আছে যে, সেখানে ভিন্ন দল ভিন্ন মত কোনো স্থানই পাচ্ছে না। স্থানীয় আওয়ামীপন্থী ক্ষমতাশীলদের হাতে কলকাঠি থাকায় অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে অন্যান্য প্রার্থীদের। এমনকি নির্বাচনী অবস্থাও এতোটাই প্রতিকূল যে, অনুকূলে ফেরানোও এখন অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কদিন আগেই কুষ্টিয়ার মিরপুরে মেয়র প্রার্থী আওয়ামী নেতা এনামুল হক নির্বাচনী বিধি ভেঙ্গে নিজ কর্মীদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে আহ্বান জানান। নির্বাচনী আইন ভঙ্গ হলেও রিটার্নিং অফিসাররা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দুঃসাহস দেখাননি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের কোথাও এখন আর নির্বাচনের পরিবেশ নেই। নির্বাচনের জন্য পদ থাকলেও আদতে ক্ষমতা থাকে স্থানীয় সরকার দলীয়দের হাতে। এতে গণতন্ত্র মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমেন/কেএইচ/১২২৬
আপনার মতামত জানানঃ