দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা লোপাটের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খনির সাবেক ছয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২২ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার(১৩জানু) দুপুরে মামলার চার্জ গঠনের দিন ওই কর্মকর্তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন দিনাজপুর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল করিম।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয়, যার আনুমানিক দাম ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।
কয়লা লোপাটের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দুদকের তফশীলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করেন। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই সাবেক সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়। এ মামলায় ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ১৯ জন এবং ১৪ নভেম্বর দিনাজপুর বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পাওয়া তিনজনের জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের পক্ষে আবেদন করা হয়। এখানে আবেদন করতে ৬২ দিন দেরি হয়েছিল। হাইকোর্ট সেটি মার্জনা (ডিলেই কনডোন) করে তাদের জামিন বাতিলে রুল জারি করেছেন।
২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হলেও তাদের মধ্যে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত (মেয়াদে) ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ টন কয়লা আত্মসাতে জড়িত। আসামিরা দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এজাহারভুক্তরা ছাড়াও চার্জশিটে ৯ জনকে যুক্ত করা হয় এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ৫ জনকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়।
এ মামলায় অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে তারা হলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পের সাবেক এমডি মাহবুবুর রহমান, আব্দুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদ আলম, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, আনিসুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহমেদসহ আরো অনেকে।
২০০৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। ২০০৫ থেকে ২০১৮ দীর্ঘ ১৩ বছরে কয়লা উত্তোলন হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টন। বর্তমানে কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুত থাকার কথা ১ লাখ ৩০ হাজার টন। বাস্তবে কয়লার মজুত পাওয়া গেছে ১৪ হাজার টনের মতো। ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টনের মতো কয়লার কোনো হদিস নেই, যার বাজারমূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র চুরি করে খোলাবাজারে এসব কয়লা বিক্রি করে দিয়েছে। তবে অনেকে মনে করেন, কয়লা লোপাট মামলায় যাদের নাম এসেছে এর বাইরেও রাঘব বোয়ালরা থেকে যেতে পারেন যারা কয়লা খনির কর্মকর্তাদের সাথে জড়িত হয়ে কয়লা গায়েব করে দিয়েছেন। এবিষয়ে সরকারের সুষ্ঠু তদন্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একইসাথে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৫
আপনার মতামত জানানঃ