ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। সেরামের কাছ থেকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। তবে সেরাম ভারতকে যে দামে টিকা দেবে তারচে দেড়গুণ বেশি দামে টিকা বিক্রি করবে বাংলাদেশে। অক্সফোর্ডের করোনাভাইরাস টিকার প্রতি ডোজ ৪ মার্কিন ডলার মূল্যে বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম পড়বে প্রায় ৩৪০ টাকা। অপরদিকে সেরাম ভারতকে দিচ্ছে প্রতি ডোজ ২০০ টাকা দামে।
সংশ্লিষ্ট অন্তত ৩টি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে প্রতিটি ভ্যাকসিন কিনছে ৪ ডলারে। ভারত যে দামে টিকা পাচ্ছে, এই মূল্য তার থেকে ৪৭ শতাংশ বেশি। এই ৩ সূত্রের একটি রয়টার্সকে বলেছে, বাংলাদেশের জন্য টিকাটির প্রতি ডোজের গড় মূল্য তিন ডলার করে হওয়া উচিত ছিল।
১৩৫ কোটি জনসংখ্যার ভারতের টিকার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দাম কম ধরা হয়েছে বলে জানায় সেরাম। ইতোমধ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষ কোভিশিল্ডের টিকার জরুরি অনুমোদন দিয়েছে।
ইউনিসেফের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার প্রতিটি ডোজ ইউরোপীয় কমিশন কিনছে ২ দশমিক ১৯ ডলারে। এই টিকা কেনা হচ্ছে সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে। টিকাটি প্রত্যেককে দুটি ডোজ করে নিতে হবে। সেই হিসেবে টিকা নিতে প্রতিজনে খরচ হবে সাড়ে চার ডলারের কম।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকেই করোনার টিকা কিনছে ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রও। ফিলিপাইনের খরচ হচ্ছে প্রতি ডোজ আড়াই ডলার। সে হিসাবে দুই ডোজে লাগবে ৫ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র আবার প্রতি ডোজ কিনছে ৪ ডলারে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ভারতে তৈরি অক্সফোর্ডের টিকার নাম হয়েছে কোভিশিল্ড। ভারতীয় সরকারকে প্রতি ডোজের এই টিকা ২৪০ দেবে সেরাম। অর্থাৎ দুই ডোজে খরচ হবে ৪৮০ টাকা।
অক্সফোর্ডের টিকা বেচতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি আছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইউনিসেফ জানাচ্ছে, সেরামের প্রস্তুতকৃত টিকার প্রতি ডোজ বাংলাদেশ কিনবে সাড়ে ৪ ডলারে। অর্থাৎ দুটি ডোজ কিনতে খরচ হবে ৯ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় দুটি ডোজ কিনতে খরচ হবে প্রায় ৮০০ টাকার কম।
সেরামের সঙ্গে চুক্তির পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে প্রতি ডোজ টিকা কিনতে পাঁচ ডলারের মতো খরচ হতে পারে।
সোমবার বাংলাদেশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কোভিশিল্ড নামের এই টিকাটির প্রথম চালান আগামী ২৫ জানুয়ারি পৌঁছাবে। ফলে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই টিকাটি গণহারে প্রয়োগ শুরু করা যাবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ২৩ হাজার ৩০২ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৮০৩ জনের।
ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ কোটি মানুষকে টিকা প্রয়োগ করতে ৬০ কোটি ডোজ টিকার প্রয়োজন পড়বে। আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি ডোজ টিকা ভারতে সরবরাহের জন্য মজুদ করে ফেলেছে।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৩
আপনার মতামত জানানঃ