বস্তুটি খুঁজে পাওয়া গেছে ক্রমাগত ঘুর্ণায়মান পালসার নক্ষত্র ঘিরে থাকা এক কক্ষপথে, যার অবস্থান পৃথিবী থেকে ৪০ হাজার আলোকবর্ষ দূরের এক ঘন নক্ষত্রপুঞ্জে।
পৃথিবীর অবস্থান যে ছায়াপথে অর্থাৎ মিল্কিওয়ে’তে দেখা মিলেছে বিশাল এক ব্যাখ্যাতীত বস্তুর।
গবেষকদের মতে, এটা হয়ত এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা বৃহত্তম নিউট্রন তারা বা সবচেয়ে বড় কৃষ্ণগহ্বরগুলোর মধ্যে ছোট। যাই হোক, এ অনুসন্ধান মহাবিশ্ব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
কোনো নিউট্রন তারা আকারে অনেক বড় হয়ে যায় যখন অন্য কোনো তারার সঙ্গে সেটি মিলে যায়। আর এরপর সে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা জানেন না এরপর ওই তারার কী হয়। তবে, প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, এমন তারাগুলো সম্ভবত ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
জোতির্বিদদের মতে, নিউট্রন তারার ভর সূর্যের চেয়ে দুই দশমিক দুই গুণ বড়। আর এর পরবর্তী অবস্থায় যেসব ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি হয়, সেগুলোর আকার এর চেয়েও বড় হয়ে থাকে, অন্তত সূর্যের চেয়ে পাঁচ গুণ বড়।
এর মধ্যে যে শূন্য জায়গাটি থাকে, তা ‘ব্ল্যাক হোল ম্যাস গ্যাপ’ নামে পরিচিত। আর শূন্য জায়গাটি কীভাবে পূরণ হয়, তা নিয়ে সঠিক ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের।
নতুন অনুসন্ধানে পাওয়া বস্তুটি ওই শূন্যস্থানের একেবারে নীচের অংশে অবস্থান করছে, যা প্রায় দুই দশমিক এক থেকে দুই দশমিক সাত সৌর ভর বা ‘সোলার মাস’-এর সমান হতে পারে। ফলে বস্তুটি শনাক্ত করতে সমস্যার মুখে পড়ছেন জোতির্বিদরা। তবে, সেটি যাই হোক, এর সম্পর্কে সঠিক ধারণা ওই রহস্যময় শূন্য জায়গার সমাধান দিতে সহায়ক হবে।
“ব্যাখ্যা যা-ই হোক – এমন বস্তুর ধরন ঠিকঠাক বোঝার বিষয়টি রোমাঞ্চকর হবে।” –বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার’-এর জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বেন স্ট্যাপার্স।
“মাধ্যাকর্ষণের ‘পালসার’ প্রজাতির নক্ষত্র থেকে সৃষ্ট কৃষ্ণগহ্বর। আর এটা নিউট্রন প্রজাতির তারা হলে পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে আরও উন্নতমানের নতুন তথ্য মিলবে এর থেকে।”
মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব পরীক্ষা করার জন্য একটি পালসার সৃষ্ট ব্ল্যাক হোল সিস্টেম গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে এবং ভারী নিউট্রন তারকা খুব উচ্চ ঘনত্বে পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে নতুন অন্তর্দৃষ্টি দেবে।
বস্তুটি খুঁজে পাওয়া গেছে ক্রমাগত ঘুর্ণায়মান পালসার নক্ষত্রের আশপাশের এক কক্ষপথে, যা পৃথিবী থেকে ৪০ হাজার আলোকবর্ষ দূরের এক ঘন নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। আর এর অনুসন্ধান চালাতে ‘রিদমিক স্পিনিং’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন জোতির্বিদরা।
এ রহস্যময় বস্তুটি শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত ‘মিরক্যাট’ নামের রেডিও টেলিস্কোপে, যখন এটি ‘এনজিসি ১৮৫১’ নামের আদিম নক্ষত্রপুঞ্জ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিল। আর এ নক্ষত্রগুলো এতটাই ঠাসা অবস্থায় আছে যে কখনও কখনও এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষও ঘটে থাকে।
এ গবেষণায় একটি নক্ষত্র থেকে বের হওয়া পালসার শনাক্ত করেছিলেন গবেষকরা। পরবর্তীতে দেখা যায়, এটি একটি রেডিও পালসার, যেখানে ঘুর্ণায়মান অবস্থায় উজ্জ্বল রেডিও আলোর রশ্মি নির্গত হয়। এ ধরনের মিটমিট করে জ্বলা আলো ব্যবহার করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিমাপ করা যায় যে, নক্ষত্রটি কতো জোরে ঘুরছে। পাশাপাশি, সে নক্ষত্রের অবস্থান বোঝার ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে এ আলোক রশ্মি।
এ পরীক্ষায় গবেষকরা শনাক্ত করেছেন, পালসারটি আসলে গতানুগতিক তারা নয় বরং কোনো তারার ধ্বংসাবশেষ। আর এর ভর পরিমাপ করতে গিয়ে তারা খুঁজে পান, এর অবস্থান আসলে ‘ব্ল্যাক হোল ম্যাস গ্যাপ’ নামের ওই রহস্যময় শূন্য জায়গাটিতে।
“এ প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি।” –বলেন জার্মানির বন শহরে অবস্থিত ‘ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর রেডিও অ্যাস্ট্রনমি’র গবেষক অরুনিমা দত্ত।
“সহায়ক বস্তুটির মূল বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটন করলে তা নিউট্রন তারা, কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল ম্যাস গ্যাপ সংশ্লিষ্ট সকল খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দেবে।”
এ গবেষণার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘এ পালসার ইন এ বাইনারি উইথ এ কমপ্যাক্ট অবজেক্ট ইন দ্য ম্যাস গ্যাপ বিটউইন নিউট্রন স্টারস অ্যান্ড ব্ল্যাক হোলস’ শীর্ষক নতুন নিবন্ধে, যা প্রকাশ পেয়েছে বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ।
আপনার মতামত জানানঃ