গহ্বরটির মূল ছায়াপথ আঁকারে অনেক ছোট, যা পৃথিবীর আশ্রয়স্থল অর্থাৎ মিল্কি ওয়ে’র একশ ভাগের এক ভাগের সমান।
ব্ল্যাক হোলটি সৃষ্টি হয়েছে মহাবিশ্বের একেবারে শুরুর দিকে, যার বয়স এক হাজার তিনশ কোটি বছরের বেশি।
পৃথিবীর মানুষের কাছে তথা মহাকাশের এক বিস্ময় ব্ল্যাকহোল। যাকে দানব বললেও ভুল হবে না। ব্লাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি স্থান জুড়ে রয়েছে, যার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই প্রখর যে তার হাত থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না, এমনকি আলোর রশ্মিও।
১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার “জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব ” দিয়ে ধারণা করেন ব্ল্যাকহোল থাকা সম্ভব। আর ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারীরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাকহোল আছে। এটি কোন সায়েন্স ফিকশন নয়। জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখান, যেকোন তারকা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে।
নতুন এ অনুসন্ধানের গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্বের আদিযুগে তৈরি এমন বিশাল ব্ল্যাক হোলের খোঁজ মানুষের বর্তমান ধারণার সঙ্গে মিল নেই, যেখানে বড় প্রশ্ন উঠছে এদের গঠন প্রক্রিয়া ও অগ্রগতি বোঝার মতো বিষয়গুলো নিয়ে।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদিম এ কৃষ্ণগহ্বরটি নিজের ছায়াপথকে ‘নিজেই গিলে খাচ্ছে’। আর পরবর্তীতে এটি এতটা সহিংস হয়ে উঠতে পারে যে এর আশপাশের ছায়াপথগুলোও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে। ব্ল্যাক হোল খালি চোখে দেখা না গেলেও এগুলো যে ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তা অনুমানযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময় এর থেকে উজ্জ্বল আভা নির্গত হওয়ার মতো ঘটনাও।
গহ্বরটির মূল ছায়াপথ আকারে অনেক ছোট, যা পৃথিবীর আশ্রয়স্থল অর্থাৎ মিল্কি ওয়ে’র একশ ভাগের এক ভাগের সমান। আর ব্ল্যাক হোলটি থেকে যে গ্যাস বের হচ্ছে, তার ফলে নতুন তারা গঠনের প্রক্রিয়াও সম্ভবত ধীরগতিতে হচ্ছে। অনুমান বলছে, কৃষ্ণগহ্বরটি নিজের মূল ছায়াপথকে গিলে খাওয়ার পর নিজেকেও ধ্বংস করে ফেলবে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন অনুসন্ধানটি অনেক ক্ষেত্রেই ‘বিশাল অগ্রগতি’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর এ ধরনের দূরবর্তী অনুসন্ধানের খুঁটিনাটি দেখতে ব্যবহার করা লাগে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো উন্নত যন্ত্র।
“এটা নতুন এক যুগ। সংবেদনশীলতা, বিশেষ করে ইনফ্রারেড প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটি বড় এক অগ্রগতি, যা অনেকটা গ্যালিলিও’র টেলিস্কোপ থেকে রাতারাতি আধুনিক টেলিস্কোপে পৌঁছে যাওয়ার মতো সাফল্য।” –বলেন ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রবের্তো মাইওলিনো।
“ওয়েব টেলিস্কোপ আসার আগে, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দেখে আমি ভেবেছি, মহাবিশ্ব হয়ত এতটাও চমৎকার নয়।”
“তবে, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। বরং মহাবিশ্ব বেশ উদারতার সঙ্গেই এর আদ্যোপান্তো দেখাচ্ছে আমাদেরকে। আর এটাতে কেবল শুরু।”
জ্যোতির্বিদদের মতে, মিল্কিওয়ে’র মতো ছায়াপথের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা বিশালকায় কৃষ্ণগহ্বরগুলোর এ অবস্থায় পৌঁছাতে কয়েকশ কোটি বছর সময় লেগেছে।
তবে, নতুন কৃষ্ণগহ্বরটি থেকে ইঙ্গিত মিলছে, এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া অন্য রকমও হতে পারে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, এগুলো জন্মের সময় থেকেই এমন বিশাল আকারের বা নিজেদের চেয়ে পাঁচ গুণ বড় বস্তুও খেয়ে ফেলতে পারে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।
“মহাবিশ্বের আদিকাল থেকেই এমন বিশাল আকারের ব্ল্যাক হোলের দেখা মিলেছে। তাই, এদের গঠন প্রক্রিয়ার ভিন্ন কোনো উপায় আছে কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।” –বলেন অধ্যাপক মাইওলিনো।
“শুরুর দিকের ছায়াপথগুলো গ্যাস সমৃদ্ধ ছিল। তাই বিভিন্ন ব্ল্যাক হোলের কাছে এগুলো ‘খাবারের বুফে’ হিসেবেই বিবেচিত হতো।”
আপনার মতামত জানানঃ