বিশ্বে তো অনেক জঙ্গল ছড়িয়ে আছে। কিন্তু কোন জঙ্গল সবচেয়ে পুরনো তার উত্তর এতদিন না থাকলেও এবার তা জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা।
যুগের পর যুগ কেটে গেছে, ঐতিহাসিকরা আবিষ্কার করেছেন মানুষের কঙ্কাল। কিন্তু কেমন ছিল গাছেরা? কেমন ছিল আজ থেকে কয়েক লক্ষ বছর আগের পরিবেশ? বিজ্ঞানীদের দৌলতে আবিষ্কার হল ৩৮৫ মিলিয়ন বছর আগের ডিভোনিয়ান জঙ্গলের দেহাবশেষ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জঙ্গলের দেখা পেলেন বিজ্ঞানীরা। যে জঙ্গলের বয়স ৩৮৫ মিলিয়ন বছর বা সাড়ে ৩৮ কোটি বছর। নিউ ইয়র্কের কাছে এই জঙ্গলের দেখা মিলেছে। অবশ্যই তা সবুজ অরণ্য হয়ে দেখা দেয়নি। জীবাশ্ম হিসাবেই তার দেখা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে সে জঙ্গলে থাকা গাছের যে জীবাশ্মগুলি পাওয়া গিয়েছে তার শিকড় বেশ অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের।
প্রসঙ্গত বিজ্ঞানীরা জানতেন বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জঙ্গল সম্বন্ধে। কিন্তু তার গাছগুলির কত বয়স বা তাদের সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য তাঁদের জানা ছিলনা। এবার পরিস্কার হল তাদের বয়স।
বিবিসি-তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী নিউ ইয়র্কের কায়রো নামে জায়গায় অভিযান চালিয়ে বিজ্ঞানীরা এই গাছের জীবাশ্মের দেখা পান। তাদের বয়স নির্ধারণ করেন। আর জানতে পারেন সেগুলি অ্যামাজন রেন ফরেস্টের থেকেও এ পৃথিবীর পুরনো জঙ্গল। যা ৪০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
নিউইয়র্কের কায়রোর বাতিল খনিতে বিজ্ঞানীরা হদিশ পেলেন এখনও অবধি সবচেয়ে পুরনো বনাঞ্চলের। মানুষের যেরকম কঙ্কাল পড়ে থাকে, গাছেরও শিকড়ের কঙ্কাল দেখেই এই জঙ্গলের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হলেন বিজ্ঞানীরা। উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু গাছের মূলের ব্যাসার্ধ ১৫ সেন্টিমিটার এবং ১১ মিটার চওড়া রেডিয়াক প্যাটার্ন। কঙ্কালগুলি দেখে, সে-সময়ের বনাঞ্চল কেমন ছিল তাও জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।
তাদের দাবি, সেই অঞ্চলে তিনধরণের গাছের উপস্থিতি ছিল। অসপারমাটোপটেরিস, আর্কিওপটেরিস এবং তৃতীয় একধরণের অজানা প্রজাতির গাছ এই অঞ্চলে ছিল। অসপারমাটোপটেরিস মূলত পাম জাতীয় গাছ যাদের প্রচুর ডালপালা এবং পাতাগুলি মোটা। এরা মূলত বীজ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় সেই অঞ্চলে প্রাথমিক মূল নিয়ে বেড়ে উঠত। আর্কিওপটেরিস ও তৃতীয় প্রজাতির উদ্ভিদগুলো কায়রো অঞ্চলে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির। আধুনিককালের উদ্ভিদের সঙ্গে তাদের বিস্তর মিল রয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। ফলকিত পাতা, মূলের বৃদ্ধি মূলত অন্তর্জনিষ্ণু।
এই ধরণের উদ্ভিদের বিবর্তন সম্পর্কিত স্পষ্ট ধারণা এই গবেষণার মাধ্যমে উঠে আসবে, এমনটি ধারণা গবেষকদের। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন উদ্ভিদের ওপর কতখানি প্রভাব ফেলেছিল তা এই গবেষণার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। তৃতীয় প্রজাতির মূল দেখে সঠিক কোনও ধারণায় উপনীত হননি বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, এগুলি লাইকোপসিডা প্রজাতির উদ্ভিদ যা একসময়ে এই অঞ্চলে একসময়ে বেঁচে ছিল।
অনুমান করা হচ্ছে, অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলে উদ্ভিদের উপস্থিতি ছিল, যা এখনো অজানা। তবে এই গবেষণা উদ্ভিদ জগতের যে একটি নতুন দিক খুলে দিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আপনার মতামত জানানঃ