ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে প্রায় ২১ হাজার মাদ্রাসা শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে এই বিশাল সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষক আছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়।
ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য ২০০৯-১০ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার রাজ্যটিতে ‘স্কিম ফর প্রোভাইডিং কোয়ালিটি এডুকেশন ইন মাদ্রাসাজ’ নামের একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করেছিল।
পরে ২০১৬ সালে সেই প্রকল্পের তহবিলে আরও ৩০০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা) যোগ করেছিল তৎকালীন বিজেপি সরকার। প্রকল্পটি চালু করার পর থেকে এ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৭০ হাজারেরও বেশি মাদ্রাসা। আসন্ন মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগেই মোদি সরকার মাদ্রাসাগুলোতে এ অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ইফতিখার আহমেদ জাভেদ রয়টার্সকে বলেন, ‘২১ হাজারেরও বেশি শিক্ষক তাদের চাকরি হারাতে চলেছেন। এতে মুসলিম ছাত্র ও শিক্ষকেরা ৩০ বছর পিছিয়ে যাবে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হুমকি ও হয়রানি করছে।
রয়টার্সের পর্যালোচনা করা একটি নথি অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের মার্চ মাসে মাদ্রাসাগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের জন্য প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত নথি থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত এই কর্মসূচির আওতায় মোদী সরকার রাজ্যগুলোর নতুন কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করেনি।
যদিও মোদি সরকার ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এই কর্মসূচির জন্য রেকর্ড তিন বিলিয়ন রুপি (৩৬ মিলিয়ন ডলার) তহবিল সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তার অফিস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে নথিতে কারণগুলো নির্দিষ্ট না করলেও একজন সরকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাদ্রাসায় মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে ২০০৯ সালের বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত আইনের সম্পর্ক থাকতে পারে।
এই আইনটি শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করে এবং সকল সরকারি স্কুলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। তার মানে দাঁড়ায়, যেহেতু সরকারি স্কুলে শিশুদের শিক্ষার জন্য ইতোমধ্যেই একটি আইন রয়েছে, সেখানে বিশেষত মাদ্রাসার জন্য আলাদা করে পৃথক কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজন পড়ে না।
সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সরকারি প্যানেলের সদস্য শহীদ আখতার বলেন, ‘এই কর্মসূচি মুসলিম শিশুদের উপকার করেছে এবং এটি আবার চালু করা উচিত।’
তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এমনকি প্রধানমন্ত্রীও চান শিশুরা ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। এই প্রকল্প যাতে বহাল থাকে, তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলব আমি।’
উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রধান জাভেদের মোদীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের অক্টোবরের পর থেকে থেকে প্রকল্পটির তহবিলে অর্থবরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
রাজ্য সরকার এপ্রিল থেকে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে এবং এই মাসে পুরোপুরি বেতন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগে যেখানে মাদ্রাসার একজন জুনিয়র শিক্ষক মূল বেতন পেতেন ১২ হাজার রুপি, বর্তমানে তার বেতন নেমে এসেছে তিন হাজার রুপিতে।
গত ১৪ বছর ধরে বাহরাইচ জেলার মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করা সামিউল্লাহ খান বলেন, “আমাদের আর কোনো চাকরি নেই এবং আমার বয়সও বেশি নতুন আরেকটি চাকরি খোঁজার জন্য।”
এদিকে বিরোধী দল ও মুসলিমদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে শত শত মাদ্রাসাকে প্রচলিত স্কুলে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত রাজ্যকে মাদ্রাসায় অর্থায়ন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ভারতের অনেক মাদ্রাসা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুদান দ্বারা পরিচালিত হয়। আর বাকিরা সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভর করে।
আপনার মতামত জানানঃ