বানর বলতেই আমরা বুঝি বুদ্ধিমান ও সামাজিক প্রাণী। বন ও লোকালয়— দুই জায়গাতেই তারা বসবাস করতে পারে স্বাচ্ছন্দ্যে।বান্দরবান জেলায় কিছু এলাকায় একসময় ছিল বানরের অভয়ারণ্য। কিন্তু দিনে দিনে লোকসংখ্যা বৃদ্ধিতে এই প্রাণীটির দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। আর এতে কমে গেছে বানরের সংখ্যা।
পেছনে ফিরে গেলে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল সবচেয়ে বড় আকারের বানরগুলো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুষ্ক ঋতুতে সবচেয়ে বড় এপগুলোর (লেজবিহীন বড় আকারের বানর) পছন্দের ফলমূল পরিবেশ থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে। আর সেকারণেই সম্ভবত কয়েক লাখ বছর আগে প্রাণিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে গিগান্টোপিথেকাস ব্ল্যাকি নামের এ প্রজাতিটি বাস করতো। এই প্রজাতিকেই সবচেয়ে বড় বানর বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এই বানরগুলো প্রায় ১০ ফুট লম্বা হতো। ওজনে ছিল প্রায় ২৯৫ কেজি পর্যন্ত। দৈহিক আকারও এদের বিলুপ্তির একটি কারণ বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং গবেষণাটির সহ-লেখক রেনাউড জোয়ানেস-বয়াউ বলেছেন, ‘যখন খাদ্য দুষ্প্রাপ্য হতে শুরু করে, তখন প্রাণিগুলো নতুন খাদ্য সন্ধানের জন্য ভারি দেহের কারণে গাছেও উঠতে পারত না। ’
দৈত্যাকার এ প্রাণিগুলো দেখতে অনেকটাই এখনকার আধুনিক ওরাঙ্গুটানের মতো। চীনের গুয়াংঝি অঞ্চলের বনভূমিতে প্রায় দুই মিলিয়ন বছর ধরে প্রাণিগুলোর বিচরণ ছিল। পরিবেশের পরিবর্তন শুরু না হওয়া পর্যন্ত তারা নিরামিষ খাবার, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের ফল ও ফুল খেয়ে বেঁচে ছিল।
গবেষকরা গুয়াংঝির বিভিন্ন গুহায় সংরক্ষিত পরাগ ও পলির নমুনাসহ জীবাশ্ম দাঁতগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা ছয় লাখ বছর আগে এই অঞ্চলে শুষ্ক ঋতুতে কীভাবে বিভিন্ন ফল ও ফুলের উৎপাদন কমতে শুরু করেছিল তা বোঝার চেষ্টা করেছেন। গবেষকরা বলছেন, বিশাল দেহের এই প্রাণিগুলো সম্ভবত দুই লাখ ১৫ হাজার থেকে দুই লাখ ৯৫ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছিল।
এখানে উল্লেখ্য, বান্দরবান জেলায় বিলুপ্ত হতে বসেছে বানর। একসময় বানরের অভয়ারণ্য থাকলেও তা এখন বিলুপ্তির পথে। খাবার ও আবাস সংকট আর প্রতিকূল পরিবেশের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে এই প্রাণীর সংখ্যা।
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপকথায় আছে, এ এলাকায় একসময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত।
এই সময় থেকে জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া নামে। অর্থাৎ মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছি অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম বান্দরবান হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে সরকারি দলিলপত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রূপ লাভ করে।
একসময় বান্দরবানে বানরের নিরাপদ আবাসস্থল পার্বত্য জেলার অরণ্যেঘেরা সবুজ পাহাড় হলেও বর্তমানে মানুষের অবাধ বিচরণ ও বন উজাড় করার ফলে পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বানর।
আপনার মতামত জানানঃ