ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আট ভারতীয়কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সবাই ভারতের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন।
অবসর গ্রহণের পর এসব ভারতীয় কাতারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতেন। আর এই প্রতিষ্ঠানটি কাতারের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ব্যাপারে সহায়তা করত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) জানিয়েছে, ভারতের নৌবাহিনীর যেসব কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে একজন হলেন কমোডোর পুর্নেন্দু তিওয়ারি।
Just IN:— Qatar gives death sentence to 8 Indian NAVY officials who were arrested for doing espionage for Israel.
— Eight former Indian NAVY officials were arrested by Qatar in November last year on espionage charges.
— Indian NAVY officials, who were working on a submarine…
— South Asia Index (@SouthAsiaIndex) October 26, 2023
তিনি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের কমান্ডার ছিলেন। তার নেতৃত্বে সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াত ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ।
বিজ্ঞাপন
এমনকি বিদেশের মাটিতে ভারতের সম্মান উজ্জল করার জন্য ২০১৯ সালে কমান্ডার পুর্নেন্দুকে ‘প্রবাসী ভারতীয় সম্মান’ পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। যা প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অষ্টম সর্বোচ্চ সম্মান।
কমোডোর পুর্নেন্দোর সঙ্গে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন ক্যাপ্টেন নভোতেজ সিং গিল, বিরেন্দ্র কুমার বেরমা, ক্যাপ্টেন সৌরভ বশিষ্ট, কমোডোর অমিত নাগপাল, কমোডোর সুগুনাকার পাকালা, কমোডোর সঞ্জিব গুপ্ত এবং নাবিক রাগেস।
ভারতের হয়ে অতীতে সম্মান বয়ে আনলেও এসব নৌ সেনা পরবর্তীতে গুপ্তচরবৃত্তির মতো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
কাতারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তারা কাতারের একটি সাবমেরিন প্রজেক্টে কাজ করতেন। ওই সময় ইসরায়েলের কাছে তথ্য পাচার শুরু করেন। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ২০২২ সালের নভেম্বরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর এ বছরের মার্চে বিচার শুরু হয়। প্রায় আট মাস বিচার প্রক্রিয়া শেষে এই ৮ নৌ সেনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কাতারের আদালত।
সাবেক নৌ সেনাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় ‘বিষ্ময়’ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের ছাড়িয়ে নিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত সরকার।
ভারতীয়দের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ও শাস্তির পেছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআইয়ের কর্তাদের হাত আছে বলে অনুমান। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য দ্বিমুখী। প্রথমত, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কর্মরত সাবেক ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মীদের সুনাম নষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, ভারত-কাতার বা অন্য দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সুসম্পর্ক নষ্ট করা।
পাকিস্তানের ক্ষোভের অন্য কারণও আছে। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত বহু ক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের জায়গা দখল করছেন ভারতীয়রা। তা ছাড়া এই তল্লাটের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন ভালো হচ্ছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সামরিক স্তরে বোঝাপড়ারও উন্নতি হচ্ছে। এ কারণে ওই আট ভারতীয়র বিরুদ্ধে পাকিস্তানই অভিযোগ আনে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার।
এই ক্ষেত্রে পাকিস্তান কুলভূষণ যাদবের উদাহরণও কাতার কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি। ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার কুলভূষণকে ইরান থেকে পাকিস্তান অপহরণ করে সে দেশে নিয়ে এসেছিল ২০১৭ সালে। যদিও পাকিস্তানের দাবি, কুলভূষণ বেলুচিস্তানে সন্ত্রাস ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়।
আপনার মতামত জানানঃ