বস্তুত, ভারতের গণতন্ত্রের অবনমন, মানবাধিকার হরণ, ঘৃণা ভাষণ, সংখ্যালঘুদের প্রতি আক্রমণ–সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ আন্তর্জাতিক স্তরে ওঠে এবং এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, সব সময় ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধাচরণ করে। ফ্রিডম হাউস, ভি ডেম ইনস্টিটিউট অথবা জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও ভারত সব সময় সরব থেকেছে।
এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু ঘটনা হলো, বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। হিজাব-হালাল বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। জোর করে নিরামিষ খাওয়ানো হয় সরকারি শিক্ষালয়ে। হিন্দু উৎসবের সময় জবরদস্তি মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজানের মাইক বন্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটে চলেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে গোরক্ষার নামে গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব। এর মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক।
ভারতে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দিনে গড়ে একটির বেশি মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশির ভাগে রাজ্যে এমন বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক হিন্দুত্ব ওয়াচ নামের একটি গ্রুপ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার ওপর নজর রাখে হিন্দুত্ব ওয়াচ। গ্রুপটি বলছে, ভারতে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত মুসলিমদের লক্ষ্য করে ২৫৫টি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা তারা নথিভুক্ত করেছে।
অবশ্য এ রকম কোনো তথ্য আগে রাখা হয়নি। তাই আগের বছরের তুলনায় এ বছর বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার সংখ্যা কতটা বেড়েছে বা কমেছে, সে বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
হিন্দুত্ব ওয়াচ জানিয়েছে, তারা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের দেওয়া সংজ্ঞা অনুসরণ করেছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংজ্ঞা হলো—ধর্ম, জাতি, জাতীয়তা, গোষ্ঠী, বর্ণ, বংশ, লিঙ্গ অথবা পরিচয় বহন করে—এমন যেকোনো বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পক্ষপাতদুষ্ট অথবা বৈষম্যমূলক ভাষা ব্যবহার করা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত।
হিন্দুত্ব ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর ও আগামী ২০২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এমন রাজ্যগুলোতেই মোট বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রায় ৭০ শতাংশ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাটে সবচেয়ে বেশি ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে এই হার ২৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং সহিংসতার পাশাপাশি মুসলিমদের আর্থসামাজিকভাবে বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তুলে ধরাসহ মুসলিমদের প্রতি সহিংস আচরণ ও বর্জনের আহ্বান জানানোর প্রায় ৮০ শতাংশ ঘটনাই ঘটেছে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত রাজ্যগুলোতে। আগামী বছরের নির্বাচনে এসব রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে মোদি সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কাছে এ ব্যাপারে মন্তব্য চাওয়া হয়েছিল। তবে তারা সাড়া দেয়নি।
২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর আমলে মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
আপনার মতামত জানানঃ