প্রেমে জড়িয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা থেকে ৫০ শতাংশ কিশোরীর হাতে অভিভাবকরা মোবাইল ফোন দেন না। ৭১ শতাংশ কিশোরী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আর ৫২ শতাংশ কিশোরী মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।
এডুকো পরিচালিত ‘বাংলাদেশে কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ পায়।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সভায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আখতার জলি, নারী অধিকার কর্মী শিপা হাফিজ, গবেষণা তথ্য প্রকাশকালে এডুকোর কনসালট্যান্ট ইরফাথ আরা ইভা জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি; ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৭৬৮ জন কিশোর-কিশোরীর ওপর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে।
আর গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছে মোট ৮৮১ জন কিশোর-কিশোরী। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ কিশোরী এবং ৪০ শতাংশ কিশোর। তাদের গড় বয়স ১৫ বছর।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৮৭ শতাংশ কিশোরী হেনস্তা, মৌখিক হয়রানি এবং ইভটিজিংয়ের শিকার। ৭৩ শতাংশ কিশোরী পারিবারিক ও বাল্যবিবাহজনিত উদ্বেগ, ৬৬ শতাংশ মানসিক আঘাত (ডিসরাপশন), ২২ শতাংশ শারীরিক আঘাত, ৬০ শতাংশ ট্রমা, ৫৫ শতাংশ ভয়ের অনুভূতির মধ্যে দিন কাটায়। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার কারণে ৬৯ শতাংশ কিশোরী আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে, ২৬ শতাংশ আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনলাইনে শিশুরা হয়রানির শিকার হয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের সুরক্ষিত করার উপায় খুঁজতে হবে। তিনি জানান, বাল্যবিবাহ বন্ধে মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি একেবারে চরম নয়। অনেক জায়গায় ভুল তথ্যও প্রকাশ করা হয়। মানবাধিকার কমিশন শিশুদেরও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সকল বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখে বাল্যবিবাহ নির্মূলে কাজ করছে।
নাসিমা আখতার জলি বলেন, ‘শেলটার হোমের অপর্যাপ্ততা আমাদের একটি বড় দুর্বলতা। অনেকেই আশ্রয় হারাবার শঙ্কায় আইনগত ব্যবস্থা নেয় না। আমাদের দেশে নারী ও শিশু সুরক্ষায় যত আইন আছে, অনেক দেশেই এত আইন নেই। কিন্তু এত আইন করেও কিছু হবে না, যদি তা বাস্তবায়ন করা না যায়।’ শিপা হাফিজ বলেন, বাল্যবিবাহ আইনের বিশেষ ধারা বাল্যবিবাহ বাড়িয়ে দেয়। ছেলে শিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি আমরা আমলে নেই না। নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে বাজেট বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বক্তারা জানান, নারী ও শিশু সুরক্ষায় বাজেট একটি বড় বিষয়। কিন্তু শুধু বাজেট বা টাকা দিলেই হবে না। পরিবারকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। নয়তো নারী ও শিশু নির্যাতন, কিশোরী হয়রানি বন্ধ হবে না। অনুষ্ঠানে বলা হয়—এডুকো একটি স্পেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, যা বাংলাদেশে ১৯৯৯ সাল থেকে শিশুদের শিক্ষা, সুরক্ষা ও সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
আপনার মতামত জানানঃ