যেকোনো ওষুধ উৎপাদনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা উৎপাদন করার অনুমোদন দিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেককে। আজ বুধবার ( ৬ জানুয়ারি)গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই টিকার নাম ‘বঙ্গভ্যাক্স’ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। টিকা উৎপাদনের পর এর ট্রায়ালের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে আলাদা অনুমোদন লাগে। টিকা উৎপাদনের পর গ্লোব বায়োটেক টিকার ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালাবে বলেও জানান ডা. আসিফ মাহমুদ।
ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে সাধারণত তিনটি ধাপ থাকে। প্রথম দুই ধাপে অল্প মানুষকে নিয়ে ট্রায়াল হয়। তৃতীয় ধাপে সংখ্যা বাড়ে। গ্লোব বায়োটেক বলছে, তারা প্রথম দুই ধাপের ট্রায়াল একসঙ্গে করতে চায়। এরপর তৃতীয় ধাপ শেষ করতে করতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এই রোগটির জন্য ভ্যাকসিন উন্নয়নের কাজ করতে শুরু করে গ্লোব বায়োটেক। তখন আন্তর্জাতিকভাবে যেসব জেনোম সিকোয়েন্স ছিল, সেগুলো বিশ্লেষণ করে একটি বিশেষ ধরনের মিউটেশনের খোঁজ পান গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা। এই মিউটেশনটি হলো D614G । তখন এই মিউটেশনের সংখ্যা খুবই কম ছিল।
বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরী করা তিনটি ভ্যাকসিনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল ক্যান্ডিডেটের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ল্যান্ডস্কেপ ডকুমেন্টে ক্লিনিক্যাল ইভালুয়েশনের তালিকায় মোট ৪২টি এবং প্রি-ক্লিনিক্যাল ইভালুয়েশনের তালিকায় ১৫৬টি ভ্যাকসিনের নাম রয়েছে। প্রি-ক্লিনিক্যাল ইভালুয়েশনের তালিকায় তিনটি ভ্যাকসিন স্থান পেয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড তৈরি করছে। এগুলো হলো DNA plasmid vaccine , Adenovirus Type 5 Vector , D614G variant LNP-encapsulated mRNA ।
তিনটি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে উন্নয়নের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে এলএনপি ভিত্তিক D614G variant LNP-encapsulated mRNA ক্যান্ডিডেটটি। মূলত এটির প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে এটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত।
একটি ভ্যাকসিন উন্নয়নের বেশ কয়েকটি ধাপ থাকে। D614G variant LNP-encapsulated mRNA ক্যান্ডিডেটটি এরই মধ্যে ছয়টি ধাপ পার হয়ে এসেছে। এটি এখন সপ্তম ধাপে রয়েছে। এই ধাপে ক্লিনিক্যাল বা হিউম্যান ট্রায়াল করা হয়। এরই মধ্যে এই ভ্যাকসিনটি প্রাণীদেহে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সেখান থেকে খুবই আশাপ্রদ ও ভাল ফল পাওয়া গেছে। যার ফলশ্রুতিতেই আসলে হিউম্যান ট্রায়ালে যাওয়া হচ্ছে।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, এই মাসের মধ্যেই তারা ট্রায়াল শুরু করতে চান।
এদিকে নিজ দেশের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আজ বুধবার দেশটির মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) এ অনুমোদন দেয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির নতুন স্ট্রেইন নিয়ন্ত্রণে দ্রুত এ পদক্ষেপ নিলো ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এর ফলে টিকা নিরাপদ ও কার্যকরের স্বীকৃতি পেল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত এ টিকা প্রস্তুত করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এ টিকার ১০০ মিলিয়ন ডোজ কেনার জন্য আগাম কার্যাদেশ দিয়ে রেখেছে ব্রিটিশ সরকার।
এ ছাড়া টিকাটি উৎপাদনে অংশীদার হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। দেশটিতে এ টিকার উৎপাদন হচ্ছে এবং শিগগিরই এটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে টিকা কিনছে বাংলাদেশ সরকার। এই টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মা। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বেক্সিমকো ফার্মা ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে জি টু জি ফর্মূলায় চুক্তি হয়েছে।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০০
আপনার মতামত জানানঃ