চার বছর ধরে চিড়িয়াখানার প্রাণী–গবেষক থেকে শুরু করে সবাই জানেন, সুলি নামের গরিলাটি পুরুষ। অথচ সবাইকে বিস্মিত করে একটি সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিয়েছে গরিলাটি। ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের কলম্বাস জু অ্যান্ড অ্যাকুয়ারিয়ামে।
কলম্বাস জু অ্যান্ড অ্যাকুয়ারিয়াম গত শুক্রবার (২১ জুলাই) তাদের ফেসবুক পোস্টে বলেছে, সপ্তাহান্তে গরিলার বাচ্চাটি চিড়িয়াখানায় জন্মেছে। ২২ ও ২৩ জুলাই দর্শনার্থীরা গরিলার বাচ্চাটির দেখা পাবেন।
সুলির বাচ্চা জন্মদানের ঘটনায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ হতবাক হয়ে গেছে। কারণ, জন্মের পর থেকেই সবার ধারণা ছিল, সুলি নামের গরিলাটি পুরুষ। সুলি এই চিড়িয়াখানায় চার বছর ধরে আছে। তবে সংরক্ষণ দল সুলির বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ঘটনাকে বিপন্ন প্রজাতির জন্য যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে প্রশংসা করছে।
কলম্বাস জু অ্যান্ড অ্যাকুয়ারিয়ামের এক পশুচিকিৎসক বলেছেন, আট বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত গরিলাদের লিঙ্গ নির্ধারণ কঠিন। এই সময় পর্যন্ত পুরুষ ও নারী গরিলা দেখতে প্রায় একই রকম। এ ছাড়া এদের যৌনাঙ্গও বোঝা যায় না।
সুলি বাচ্চা জন্ম দেওয়ায় চিড়িয়াখানার কর্মীরা আনন্দিত। চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা বলছেন, এই গরিলার আগমনে তাঁরা রোমাঞ্চিত। ১৯৫৬ সালের পর থেকে তাঁদের চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া এটা ৩৪তম গরিলা। বিশ্বে এই চিড়িয়াখানাতেই ১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো গরিলার জন্ম হয়।
বাচ্চা গরিলাটি ভালো আছে। প্রথমবার মা হওয়া সুলি তার বাচ্চার যত্ন নিচ্ছে। চিড়িয়াখানার প্রাণী পরিচর্যা দল সুস্থতা পরীক্ষার আগে মা ও বাচ্চা গরিলাকে একে অপরের সঙ্গে এবং অন্যদের সঙ্গেও মেশার সুযোগ দিয়েছে। সুলির বাচ্চার বাবা নির্ধারণে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ডিএনএ পরীক্ষা করবে।
ঠিকমতো যত্ন পেলে সুলির মতো প্রজাতির পশ্চিমা নিম্নভূমির গরিলা ৫০ বছর পর্যন্ত সুস্থভাবে বাঁচে।
এগুলো নিয়ে গবেষণা ও এদের সুরক্ষিত রাখার সুযোগ পাওয়া যায়। বাচ্চা গরিলাটি চিড়িয়াখানায় শুধু এই প্রজাতিকে সুরক্ষিতই রাখবে না, এই প্রজাতির বন্য প্রাণীদেরও সুরক্ষিত রাখবে।
এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে লিঙ্গ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে পড়তে হয়নি। হয়েছিল অন্যকিছু। বিজ্ঞানীরা প্রথম কোনো কুমিরের সন্ধান পেয়েছেন, যেটি কোনো পুরুষ কুমিরের সংস্পর্শে না এসেই ডিম দিয়েছে এবং এ থেকে বাচ্চা হয়েছে। যদিও অন্য অনেক প্রাণীর মতো কুমিরের বংশবিস্তার হয় যৌন প্রজনন পদ্ধতিতে।
এ ঘটনা ঘটেছে কোস্টারিকার একটি চিড়িয়াখানায়। যে কুমির এই বাচ্চা দিয়েছে, সেটি ১৬ বছর ধরে একা ছিল।
যে কুমিরটি এই বাচ্চা দিয়েছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের। ২০১৮ সালে এটি ১৪টি ডিম দিয়েছিল। এরপর যেটা হলো, সেটা সত্যিকার অর্থেই অবিশ্বাস্য। কারণ, এই ডিমগুলো থেকে একটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী বায়োলজি লেটারস-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ভ্রূণের জিন বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্লেষণে তাঁরা দেখেছেন, ভ্রূণের ডিএনএতে কোনো পুরুষ কুমিরের ডিএনএর সংমিশ্রণ নেই। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ভার্জিন বার্থ’।
অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এর আগে যে এমনটা পাওয়া যায়নি, তা নয়। এর আগে মাছ, পাখি, সাপ, টিকটিকিজাতীয় প্রাণীর এমন ভার্জিন বার্থের খবর পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুমিরের ক্ষেত্রে এটাই প্রথম।
একটি মা প্রাণীর ডিম থেকে এমন বাচ্চা জন্মের এই ঘটনাকে ‘ফ্যাকাল্টেটিভ পার্থেনোজেনেসিস’ বলা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ডিমে পুরুষ প্রাণীর কোনো অবদান থাকে না।
এসডব্লিউএসএস১৮৩৫
আপনার মতামত জানানঃ