আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানে এমন উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি। আসামিরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ও প্রদীপ দাস।
আসামিদের বিরুদ্ধে ‘হিন্দু লাইভস ম্যাটার’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে আইভি রহমানের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল (সোমবার) ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তিনি এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সিআইডিকে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলায় অভিযোগ বলা হয়, গত ২৩ নভেম্বর, ২০২০ প্রদীপ দাসের ইউটিউব চ্যানেল ‘হিন্দু লাইভস ম্যাটার’-এ একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ১৪ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ওই ভিডিওতে আসামি খোকন সাহা তার বক্তব্যে বলেন, হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি মেয়র মহোদয়ের দাদা মাহাতাব উদ্দিনসহ তাঁর পরিবারবর্গ অবৈধভাবে দখল করে আছেন। যার বাজার মূল্য এক হাজার কোটি টাকা।
ভিডিওতে মেয়র আইভির বিরুদ্ধে মন্দিরের সেবায়েত গুম এর অভিযোগ আনা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিভাবক উল্লেখ করে ভিডিওতে ভবিষ্যতে মেয়র আইভিকে নমিনেশন না দেওয়ার আহবান জানানো হয়। অন্যদিকে সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, যারা দেবোত্তর সম্পত্তি ভোগ করে তাদেরকে কখনও ভোট দিবেন না। উল্লেখ্য যে, গত ১ ডিসেম্বর, ২০২০ আরও একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
এদিকে আইভি ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করতে গত ২১ ডিসেম্বর, ২০২০ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় যান। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত করার মতো প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না থাকায় তাকে থানা থেকে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেয়র আইভি এজাহারে বলেন, ‘আসামিরা মিথ্যা, বানোয়াট এবং মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করেছে। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মেয়রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।’
খোকন সাহা রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য এবং আগামী মেয়র নির্বাচনে আইভি যেন দল থেকে মনোনয়ন না পান, সে উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রচার করেছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলান অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি প্রদীপ দাস ও খোকন সাহা পরস্পর যোগসাজসে বাদিনী সম্পর্কে প্রকাশিত উক্ত বক্তব্য মিথ্যা ও বানোয়াট এবং মানহানিকর। এতে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিকভাবে মেয়রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। খোকন সাহা রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য এবং আগামী মেয়র নির্বাচনে যেন বর্তমান মেয়র দল থেকে নমিনেশন না পান; সেই উদ্দেশ্যে এসব মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করেছেন।
সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী মত দমনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিগত বেশ কিছুদিন ধরে এই আইনটির অপব্যবহার ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এসডব্লিউ/ফাআ/নসদ/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ