বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ৫৯টি অনিবন্ধিত ও অবৈধ ইন্টারনেট প্রটোকল বা আইপিটিভি বন্ধ করেছে। আজ রোববার বিটিআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়েছে।
আইপিটিভি সেবাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট করতে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বলে জানায় বিটিআরসি। টেলিভিশনে প্রচারিত আধেয় বা কনটেন্ট ইন্টারনেট প্রটোকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সম্প্রচার করার প্রক্রিয়া হলো আইপিটিভি।
বিটিআরসি কেবল লাইসেন্সধারী আইএসপি (ইন্টারনেট সেবাদাতা) প্রতিষ্ঠানকে আইপিভিত্তিক ডেটা সার্ভিসের (স্ট্রিমিং সেবা, আইপিটিভি, ভিডিও অন ডিমান্ড) অনুমোদন দিয়ে থাকে।
বিটিআরসির আইপিটিভি সেবার অনুমোদন পেয়েই আইএসপি অপারেটররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুধু তাদের গ্রাহকদেরই প্রদর্শন করতে পারবেন। তবে প্রতিটি চ্যানেল বা অনুষ্ঠান বা আধেয় প্রচারে প্রয়োজনীয় চুক্তি বা অনুমোদন বা ছাড়পত্র সংশ্লিষ্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করতে হবে।
বিটিআরসি বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ডোমেইন ক্রয়/ফেসবুক/ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে জনগণকে আইপিটিভি প্রদর্শন করছে, যার কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। অনুমোদন ব্যতিরেকে ওই সম্প্রচার অনৈতিক এবং টেলিযোগাযোগ আইনের ব্যত্যয়।
এজন্য এরই মধ্যে এরূপ ৫৯টি অনিবন্ধিত অবৈধ আইপিটিভি কমিশন থেকে বন্ধ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের সহিত বিটিআরসি আইপিভিত্তিক ডাটা সার্ভিসের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্যাটেলাইট টিভির পাশাপাশি আইপিটিভিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদের দেশে আইপিটিভি ব্যপকভাবে শুরু না হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্যাটেলাইট টিভির চেয়েও অনেক বেশি জনপ্রিয় এই মাধ্যম। কারণ আইপিটিভি এর সেটআপ খরচ স্যাটেলাইট টিভির তুলনায় অনেক কম।
তাছাড়া স্যাটেলাইট টিভির চেয়ে আইপিটিভ এর কভারেজও অনেক বেশি। অর্থাৎ স্যাটেলাইট টিভির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে টিভি দেখা যায় না, কিন্তু আইপিটিভির ক্ষেত্রে যেখানে ইন্টারনেট সেখানেই এর এর অনুষ্ঠান পৌছে দেওয়া সম্ভব। এমনকি স্বল্পপরিসরে একটি ছোটখাটো অফিস নিয়েই শুরু করে দেওয়া যায় একটি আইপিটিভি।
অনেকেই ভাবতে পারে আইপিটিভি-এর পিকচার কোয়ালিটি স্যাটেলাইট টিভির তুলনায় অনেক কম, কিন্তু এই ধারণাটি ভুল। বর্তমানে আইপিটিভি টেকনোলজিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, এখন অল্প ব্যান্ডউইথ দিয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ কোয়ালিটির লাইভ স্ট্রিমিং দেখা যায়। এবং এখন শুধু ‘এইচডি’ নয় ‘ফোর-কে’ আইপিটিভির সম্প্রচারও হয়েছে। তাই স্যাটেলাইট প্রযুক্তির চেয়ে আইপিটিভি প্রযুক্তি বরং অনেক বেশি এগিয়েই আছে।
এদিকে, সম্প্রতিই আইপিটিভি ও ইউটিউব চ্যানেল নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, আমরা যেভাবে অনলাইনের নিবন্ধন দিচ্ছি, একইভাবে ইউটিউব বা আইপিটিভি নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখনো কাউকে ইউটিউব বা আইপিটিভির নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম গত মাস থেকে দিতে পারবো। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ায় আমরা দিতে পারিনি।
তিনি বলেন, ব্যাঙের ছাতার মতো আইপিটিভি করার যে সুযোগ রয়েছে এটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। যে সমস্ত আইপিটিভি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং নিজেকে টেলিভিশন চ্যানেলের মতো জাহির করছে খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
গত বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানান। এছাড়া সাত দিনের মধ্যে অনিবন্ধিত সব অনলাইন নিউজপোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এর আগে অনিবন্ধিত ও অননুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নীলু ও জারিন রহমান। রাস্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
আদেশের পর রাশিদা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, অননুমোদিত ও অনিবন্ধিত অনলাইন মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে গত আগস্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল। তখন আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দিয়েছিলেন।
এবার ওই রিটেই সম্পূরক আবেদন করে অনিবন্ধিত, অনুমোদিত নিউজপোর্টাল বন্ধের আরজি জানিয়েছিলাম। ওই আবেদনে সংশ্নিষ্টদের সাত দিনের মধ্যে অনিবন্ধিত, অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, যারা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তাদের কী হবে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য মন্ত্রী বলেন, আদালতকে আমরা জানাব, সাত দিনের মধ্যে সব বন্ধ করে দেওয়া সমীচীন হবে না।
ড. হাছান বলেন, অনলাইন নিউজপোর্টাল রেজিস্ট্রেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারণ ইতোমধ্যেই রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত ছাড়া আর কোনো অনলাইন ভবিষ্যতে বের হবে না বা আজকে যে সমস্ত পত্র-পত্রিকা আছে সেগুলো ছাড়া ভবিষ্যতে আর কোনো পত্র-পত্রিকা বের হবে না, তেমন নিয়ম কোথাও নেই।
তিনি বলেন, যার যেমন ইচ্ছে একটি অনলাইন খুলে বসবে এবং সেটি নিয়ে যেমন ইচ্ছে তেমন সংবাদ পরিবেশন করবে, মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করবে, গুজব রটানোর কাজে ব্যস্ত হবে, অন্যের চরিত্র হনন করবে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কোন ব্যবসায়িক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সেখানে লেখালেখি হবে, এটি কখনোই সমীচীন নয়। সেক্ষেত্রে এ আদেশ অবশ্যই একটি সহায়ক আদেশ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮১৩
আপনার মতামত জানানঃ