সারাদেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের আদেশ জারি করে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতার কারণে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারছে না সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে গত এক বছরে অন্তত ৮০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য হয়েছে। শিক্ষকদের চাকরি থেকে অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে এসব পদ শূন্য হয়। অথচ নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।’
জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পরীক্ষায় কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু প্রশাসনিক কাজে ধীরগতি ও মামলা জটে আটকে আছে এসব নিয়োগ। গত তিন বছরে কারো নিয়োগই হয়নি। এরই মধ্যে অনেকের চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছে। সময় যত গড়াবে, চাকরিতে প্রবেশের যোগ্যতা হারাবেন অনেকেই। এ কারণে প্রার্থীরা চিন্তিত, শঙ্কিত।
প্রতি বছরই সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও গেল তিন বছরে একজন শিক্ষকও নিয়োগ দিতে পারেনি তারা। জানা গেছে, ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মেধা তালিকা তৈরি করা হয়। নিবন্ধিত প্রার্থীদের ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এমপিও নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে নেওয়া এনটিআরসিএর ১৩তম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ চাকরি প্রার্থীর মধ্যে থেকে শূন্যপদের অনুকূলে ১৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থীকে পিএসসির আদলে তিন ধাপে পরীক্ষা নিয়ে বাছাই করে এ প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রণালয় তাদের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেয়।
তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির ঠিক আগে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরি বঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলায় রায় তাদের পক্ষে গেলে ঐ শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু এনটিআরসিএ নিয়োগ না দিয়ে রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে।
এ ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু কোর্টের রায়ে সমন্বিত মেধা তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, তাই শুধু ১৩তম ব্যাচের চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গেলে তা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। ফলে এখন সমন্বিত মেধা তালিকার মধ্যে সবাই প্রবেশ করেছে। এ জন্য আমরা রিভিউতে বলেছি একটি ব্যাচকে নিয়োগ দিলে বাকিরা মামলা করতে কোর্টে যাবে। বিষয়টি নিয়ে রিভিউ আবেদন করেছে এনটিআরসিএ। রিভিউ রায়ের ওপর নির্ভর করছে এনটিআরসিএ কী করবে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহাকারি শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানায়, নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।প্রার্থীদের আবেদনপত্র, পরীক্ষার প্রশ্নসহ সবকিছু গুছিয়ে রাখার কাজ চলছে। সরকারের সবুজ সংকেত পেলে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
আরও জানায়, এখনো স্কুল-কলেজ খোলেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না হলে আমরা পরীক্ষা নিতে পারবো না। কেননা আমাদের প্রায় ১৪ লাখ প্রার্থীর পরীক্ষা নিতে হবে। এত বিপুল সংখ্যক চাকরি প্রত্যাশীর পরীক্ষা নিতে গেলে আমাদের অনেকগুলো কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললে পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না।
শিক্ষক নিয়োগে সৃষ্ট জটিলতা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষকদের আরো ভোগান্তি বাড়লো। দেশে ইতোমধ্যে শূন্য পদে আশি হাজার পদ খালি থাকাতে কমতে পারে শিক্ষার মান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা মনে করেন, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শূন্য পদ নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর পুরোদমে ক্লাস শুরু হলে শিক্ষক সংকটের কারণে একাডেমিক কার্যক্রম রীতিমত হোঁচট খাবে। এতগুলো পদে শিক্ষকহীনতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। যদিও এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা কেটে গেলে দ্রুতই বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি আর অনিয়মের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সৃষ্ট সমস্যা আরো ঘনীভূত হতে পারে।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ