বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় ঘরহীন পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কার্যক্রম চললেও, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন উপলক্ষে সারা দেশে গৃহ ও ভূমিহীন ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩ পরিবারকে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুর্যোগ-সহনীয় বাড়ি প্রকল্প। দুর্যোগ-সহনীয় উল্লেখ থাকলেও নির্মাণের সময়ই এসব বাড়ির দেয়াল ধসে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত শনিবার(০২ জানু) দেওয়ানগঞ্জ উপজে’লার চুকাইবাড়ী ৭নং ওয়ার্ডের মধ্য চুকাইবাড়ী রামপুরা গ্রামে নির্মাণাধীন ঘরের দেয়াল ধসে চাপা পড়ে আহত হয় মমতা বেগম নামে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধা। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে একই এলাকায় বারান্দার দেওয়াল ভেঙে পড়েছে আনোয়ারা বেগমের নির্মাণাধীন ঘরের।
জানা যায়, আশি বছর বয়সী মমতা বেগম একজন অসহায় বৃদ্ধা। তার নামে প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিববর্ষে দুর্যোগ-সহনীয় একটি পাকা বাড়ি বরাদ্দ হয়। বাড়িতে নির্মাণ কাজ চলছিল। দুপুরে নির্মাণাধীন ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। এ সময় মমতাজ বেগম ও তার নাতি রাসেল (২৬) দেয়াল-চাপা পড়ে। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেন। পরে মমতা বেগমকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
রোববার সন্ধ্যায় দেওয়ানগঞ্জ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাফিজ জানান, ভর্তিকৃত বৃদ্ধার কোমর নাড়াতে পারছেন না। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ পাঠানো হতে পারে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মমতাজ বেগম আক্ষেপ করে বলেন, সরকার আমাদের ঘর দিছে। সেই ঘর আমার উপরেই ভাইঙ্গা পড়ল!
বৃদ্ধার মেয়ে রাশেদার অভিযোগ, বালু বেশি দিয়ে কাজ করাতেই ঘরটি ভেঙে পড়েছে।
এদিকে একই এলাকায় বারান্দার দেওয়াল ভেঙে পড়েছে আনোয়ারা বেগমের নির্মাণাধীন ঘরের। তিনি বলেন, আমি আর ওই ঘরে উঠব না। বাকিটুকু বাতাসে ভেঙে পড়বে।
নির্মাণ মিস্ত্রি এরশাদ জানান, ছয় বস্তা বালুর সঙ্গে এক বস্তা সিমেন্ট দিয়ে কাজ করা হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হাসান জানান, উপজেলায় ১৭২টি দুর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণ চলছে। ১৯ ফুট প্রস্থ ও নয় ফুট দৈর্ঘ্যরে প্রতিটি ঘরের নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ জানান, নির্মাণকাজে ত্রুটি থাকতে পারে। অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনা আমরা খতিয়ে দেখছি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দুর্যোগ-সহনীয় এসব বাড়ি যেখানে অল্প বাতাসেই ধসে পড়ে সেখানে দুর্যোগ কতটা মোকাবিলা করতে সক্ষম তা উক্ত ঘটনা থেকেই ধারণা করা যায়। তারা মনে করেন, বাড়ির প্রতিটা ইটে ইটে সিমেন্ট বালু নয়, প্রকল্পের লোকজনের দুর্নীতি থাকায় দেয়াল ইটগুলো ধরে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। টিন-শেড বিল্ডিং তৈরীতে সরকার ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করলেও বাস্তবে যে তা সামান্য অর্থে কোনো রকম স্বান্তনা বাড়ি নির্মাণে হাত দিয়েছে, তা দেয়াল ভেঙে পড়াতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের আওয়াতায় নির্মাণাধীন বাড়িতে লোকজন বসবাসের অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যেখানে বসবাস নিরাপদ নয় সেখানে দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো প্রশ্নই আসে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারকে এসব প্রকল্পে কড়া নজরদারি দাবি করে জানান, এসব বাড়ি নিরাপত্তার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারি দুর্নীতির কারণে বড় কোনো ঘটনা ঘটার আগেই সরকারকে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডাব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ