আমাজনের ২ মিলিয়ন বর্গমাইল আয়তনের বিশাল জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় প্রাচীন সভ্যতা, পৃথিবীর ইতিহাসে যা মায়া সভ্যতা নামে পরিচিত। হাজার হাজার বছর পুরনো এ সভ্যতাকে আমেরিকাতে স্প্যানিশদের আসার আগে সবচেয়ে আধুনিক সভ্যতা হিসেবে ধরা হয়। তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত সভ্যতা ছিল এ মায়া সভ্যতা। মায়া সভ্যতায় বসবাসকারীদের মায়ানও বলা হতো।
২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মধ্য আমেরিকার বর্তমান বেলিজে মায়া সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায়। বর্তমান মধ্য আমেরিকার মেক্সিকো, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, এল সালভেদরের ১০০০ কিলোমিটার জুড়ে ছিল মায়া সভ্যতা। এর বাইরেও অনেক জায়গায় শিল্প ও সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রি-ক্লাসিক্যাল পিরিয়ডে, যা ২৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, মায়া সভ্যতার ধীরে ধীরে প্রসারণ ঘটতে থাকে। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তারা কৃষি কাজ এবং বসতি স্থাপন শুরু করে। তার পূর্বে তারা শিকার করে ও ফলমূল জোগাড় করে জীবনধারণ করত। এরপর ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে সেকোনুস্ক অঞ্চলে তারা বসতি স্থাপন করে। এরপর তারা ধীরে ধীরে পুরো মেসোআমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে ও বিশাল বিশাল স্থাপত্য কার্যের শুরু করে। এসব অঞ্চলজুড়ে তাদের শিলালিপি, মৃৎশিল্প ও স্থাপত্য কলার বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়।
২৫০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ ছিল মায়া সভ্যতার স্বর্ণযুগ। এ সময় এ অঞ্চলে ৪০টিরও বেশি শহর প্রতিষ্ঠা লাভ করে যার কিছু কিছুর জনসংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি ছিল।
মূলত প্রাচীন সভ্যতা মানেই রহস্যে ঘেরা আদি মানববসতি, তাদের সংস্কৃতি, রোমাঞ্চকর ইতিহাস সবমিলিয়ে পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম মায়া সভ্যতা। এটি শুধু প্রাচীনই নয় বরং সভ্যতার মধ্যে সব থেকে বেশি রহস্যে ঘেরা রয়েছে মায়া সভ্যতা। যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা এই সভত্যর রহস্য উন্মোচনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আর এর মাঝেই এবার এক চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে। মূলত, দক্ষিণ আমেরিকায় গবেষণারত বিজ্ঞানীরা এমন একটি আবিষ্কার করেছেন যা রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে সবাইকে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, বিজ্ঞানীরা ৪১৭ টি প্রাচীন মায়া শহর আবিষ্কার করেছেন। গুয়াতেমালার ঘন জঙ্গলে এই সব শহরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
জানা গিয়েছে, এই শহরগুলি প্রায় ৩ হাজার বছরের পুরোনো। আমেরিকা এবং গুয়াতেমালার প্রত্নতাত্ত্বিকদের দল এই শহরগুলি আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, এই সমস্ত শহরগুলি একে অপরের সাথে ১৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ “হাইওয়ে” দ্বারা সংযুক্ত ছিল। শুধু তাই নয়, এহেন বড় আবিষ্কার এবার ঐতিহাসিকদের মায়া সভ্যতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই শহরগুলি প্রায় ১,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি রাস্তা সহ শহরগুলির নেটওয়ার্ক, হাইড্রোলিক সিস্টেম এবং কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রমাণ করে যে, ৩ হাজার বছর আগে মধ্য আমেরিকায় বসবাসকারী মায়া সভ্যতার মানুষেরা অনেক বেশি উন্নত ছিল।
রাডার প্রযুক্তির সাহায্যে আবিষ্কারটি করা হয়েছে। মূলত, এটি হাজার হাজার বছর ধরে ঘন জঙ্গলের ভিতরে লুকিয়ে থাকা কাঠামোর মানচিত্র তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
মায়া সভ্যতা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এদিকে, এই আবিষ্কারের পর আমেরিকা মহাদেশের ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। নথি অনুসারে, এই আবিষ্কারগুলি মায়া সভ্যতার আর্থ-সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক শক্তির আভাস দেয়।
২০১৫ সাল থেকে, আমেরিকা এবং গুয়াতেমালার বিজ্ঞানীদের এই দল মধ্য আমেরিকার মায়া সভ্যতার মানচিত্র তৈরি করছেন। এই বিজ্ঞানীরা লাইডার প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
এদিকে, এই প্রযুক্তির সাহায্যে, বিজ্ঞানীরা প্রাচীন বাঁধ, জলাধার, পিরামিড, প্ল্যাটফর্ম, রাস্তার নেটওয়ার্কের মতো অংশ প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। এই আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি মিশরের পিরামিডের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক আবিষ্কার হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন যে, এই সভ্যতা ৮৫০ থেকে ১,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে পতনের পথে অগ্রসর হয় এবং অবশেষে পতনও ঘটে। এমতাবস্থায়, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/০৭১৪
আপনার মতামত জানানঃ