জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এশিয়ার ১৬টি দেশের পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ–হিমালয়ে পানি প্রবাহের বিঘ্নতা সৃষ্টি এশিয়ার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর ইন্ডিয়া টুডে’র।
হিন্দুকুশ–হিমালয় অঞ্চল দিয়ে ১০টি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নদীর প্রবাহ রয়েছে। এ নদীগুলোর পানির সঙ্গে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনযাত্রা জড়িত। এমনকি বার্ষিক জিডিপির হিসেবে এর সাথে প্রায় ৪.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পর্কিত।
তবে আশঙ্কার বিষয় এই যে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ হিন্দুকুশ–হিমালয় বেসিন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় আঞ্চলিক পর্যায়ে নদীগুলোর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। নতুবা এ অঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে।
এ অঞ্চলের জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা ১০টি নদীর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং চীনের ইয়াংজি ও হুয়াংহো নদী অন্যতম। এছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে আন্তঃসীমান্ত নদী মেকং ও সালউইন।
চায়না ওয়াটার রিস্ক নামক একটি থিংক ট্যাংকের এই গবেষণা অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমবাহ গলে যাওয়া ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলের জন্য গুরুতর হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
থিংক ট্যাংকটি মনে করে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরিকৃত অবকাঠামো এ সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। যদি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্যাসগুলোর নিঃসরণ কমানো না যায় তবে এই নদীগুলো ক্রমবর্ধমান মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হবে।
গবেষকেরা জানান, নদীগুলোর ওপর মোট ১৬টি দেশের তিন-চতুর্থাংশ জলবিদ্যুৎ ও ৪৪ ভাগ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নির্ভরশীল। এ তালিকায় আফগানিস্তান, নেপালসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে। জ্বালানির চাহিদা মেটাতে এসব দেশ এখনো খুব বেশি পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।
গবেষণা অনুযায়ী, পানিসংকটের কারণে এ দেশগুলোর প্রায় ৩০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ‘উচ্চ’ কিংবা ‘মারাত্মক উচ্চ’ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যার পরিমাণ শিল্পোন্নত দেশ জাপানের মোট বিদ্যুৎশক্তির প্রায় সমান।
অন্যদিকে চীনের ইয়াংজি বেসিন দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবনযাত্রায় সাথে সম্পর্কযুক্ত। একইসাথে নদীটি দেশটির ১৫ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথেও জড়িত। ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলটি গতবছর রেকর্ড পরিমাণ খরার সম্মুখীন হয়েছে। যার ফলে সেই সময়ে জলবিদ্যুৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বেশ সংকট দেখা গিয়েছিল।
খরার পর থেকে চীন সরকার ভবিষ্যতে এ সমস্যা মোকাবিলায় নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেদ্র তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যও প্রচুর পানির প্রয়োজন হয় এবং চীন কিংবা ভারতের মতো বড় দেশে এই প্রবণতা পানির সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যেহেতু জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকি বাড়ছে, তাই পানি ও বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের চাপ বাড়ছে। গত বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, হিমালয়ের হিমবাহ গলতে থাকলে প্রায় এর বিলিয়ন মানুষ এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আইআইটি-ইন্দোরের এক গবেষণায় বলা হয়, হিমবাহ ও বরফ এ অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি এগুলো ক্রমাগত গলতেই থাকে, তবে একদিন হয়তো এসব উৎস থেকে আর পানিই পাওয়া যাবে না।
এসডব্লিউএসএস/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ